ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রিজার্ভ ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার শর্ত শিথিল আইএমএফের

রিজার্ভ ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার শর্ত শিথিল আইএমএফের

৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্যাকেজের আওতায়, রিজার্ভের অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রার শর্ত দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), তা সংশোধনে রাজি হয়েছে। আইএমএফ মিশনের সাথে আলোচনায় জড়িত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, বৈশ্বিক ঋণদাতাটি ফরেক্স রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬.৭ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ২০২৪ সালের জুন নাগাদ ২০.১৯ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ গঠনের নতুন লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেবে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সারির পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ যখন পশ্চিমা দেশগুলোয় চাহিদা কমে যাওয়ার সম্মুখীন; মূল্যস্ফীতি ও সার, জ্বালানি ও শিল্প কাঁচামাল আমদানির উচ্চ ব্যয় যখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে- এরই মধ্যে আইএমএফের সাথে আলোচনায় এ অগ্রগতি এলো। আলোচিত এসব চ্যালেঞ্জের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্র রিজার্ভের ক্ষয় হয়েছে, এবং গেল বছরের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশি টাকার ৩৫ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটেছে। আইএমএফের ঋণ পর্যালোচনা মিশন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। গতকাল মঙ্গলবার মিশন কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে অংশ নেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

বৈঠকে আইএমএফ মিশন চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সরকারকে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল, সেটিও কমাতে রাজি হয়েছে। তবে সরকারের প্রাইমারি ব্যালেন্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইএমএফ। অর্থনীতিবিদরা ঋণ কর্মসূচির কিছু শর্ত শিথিলের আইএমএফের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও, সতর্ক করে বলেছেন, যথাযথ ব্যবস্থাপনা ছাড়া নতুন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করাও কঠিন হবে। এ বছরের শুরুতে আইএমএফ সেপ্টেম্বর নাগাদ ২৫.৩৪ বিলিয়ন ডলারের নিট বা প্রকৃত ফরেক্স রিজার্ভ গঠনের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছিল। কিন্তু, আইএমএফের রিজার্ভ হিসাব করার পদ্ধতির ষষ্ঠ সংস্করণ বিপিএম৬ (ইচগ৬) অনুযায়ী, বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ ২১.১৫ বিলিয়ন ডলার। নিট হিসাব করলে এই পরিমাণ আরও কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী বছরের জুন নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ২৬.৮১ বিলিয়ন ডলার রাখার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। আগের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে তা থেকে কমিয়ে জুন নাগাদ তা ২০.১৯ বিলিয়ন ডলার করার বিষয়ে রাজি হয়েছে আইএমএফ। এই সংশোধন বাংলাদেশের জন্য বড় স্বস্তি হয়ে এলো।’ এর আগে গত ৪ অক্টোবর ঢাকায় আসেন আইএমএফের ঋণ পর্যালোচনা মিশনের সদস্যরা। এরপর তারা বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে বৈঠক করছেন। আগামী ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত মিশনটি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবে। মিশন শেষ হওয়ার শেষ দিনে এসব আলোচনার ফলাফল জানাবেন আইএমএফ মিশনের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশের বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে ১৯ অক্টোবর একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার মিশনের সাথে বৈঠকের আগে অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার যেসব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে আইএমএফের শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে তাদের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে আগামী জুনের মধ্যে সংস্থাগুলো তাদের সংশ্লিষ্ট টার্গেট কতটা অর্জন করতে পারবে, তা জানতে চান অর্থ সচিব। সংস্থাগুলোর মতামত নিয়ে দুপুরে আইএমএফ মিশনের সাথে বৈঠকে অংশ নেন অর্থ সচিব। সেখানে রিজার্ভ, রাজস্ব আয় ও সরকারের প্রাইমারি ব্যালেন্স নিয়ে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইএমএফ মিশনের সাথে বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি কর্মকর্তারা তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, জরুরি আমদানির ব্যয়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বিবেচনায় আগামী বছরের জুন নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে এটি কমাতে সম্মতি দেয় আইএমএফ। ঋণ কর্মসূচির একটি শর্ত হিসেবে, প্রাথমিকভাবে চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৪ লাখ ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল আইএমএফ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত