ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বাড়ল দেড়গুণ

মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বাড়ল দেড়গুণ

অপারেটরদের অসন্তুষ্টির মধ্যেই গত শনিবার রাত ১২টা থেকে ইন্টারনেট গ্রাহকের জন্য তিন দিন ও ১৫ দিনের ডেটা প্যাকেজ বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করত প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি জানিয়েছিল, তিন দিন মেয়াদে গ্রাহকরা যে পরিমাণ ডেটা পেত, সে পরিমাণ ডেটা একই দামে কিনে সাত দিন ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু তা হয়নি। মোবাইল অপারেটররা এর দাম দেড়গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গ্রামীণফোনের তিন মেয়াদের ১ জিবি ডেটার সর্বশেষ দাম ছিল ৪৬ টাকা। নতুন সাত দিন মেয়দে এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯ টাকা। মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকও একই হারে দাম বাড়িয়েছে। মোবাইল অপারেটর রবি জানিয়েছে, তাদের প্যাকেজের মূল্য ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে অপারেটররা আশা করছে, সরকার ও বিটিআরসি গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে এই নতুন প্যাকেজ রেগুলেশনটি পুনর্বিবেচনা করবে। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ডেটার মূল্য পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। অচিরেই এটা ঠিক করে দেওয়া হবে। মোবাইলের ডেটা প্যাকেজ নিয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর নতুন একটি নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে বিটিআরসি। এতে ডেটার ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদি প্যাকেজ বন্ধ, প্যাকেজের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪০টি নির্ধারণ করে তা ১৫ অক্টোবর থেকে মোবাইল অপারেটরদের কার্যকর করতে বলা হয়। এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এক সভায় মোবাইল অপারেটরদের ডেটা ও ডেটাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্যাকেজের নতুন এই নির্দেশিকার উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এর আগে গত বছর এক নির্দেশিকায় ৩, ৭, ১৫, ৩০ ও আনলিমিটেড মেয়াদে মোবাইল অপারেটরদের জন্য সর্বোচ্চ ৯৫টি ডেটা প্যাকেজ নির্ধারণ করে দিয়েছিল বিটিআরসি। মোবাইল অপারেটররা আগেই জানিয়েছিল, দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা ৬৯.২৩ ভাগ ৩ দিনের ডেটা প্যাকেজ ব্যবহার করে। এ অবস্থায় জনপ্রিয় এই প্যাকেজ বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে বিটিআরসির যুক্তি, তিন দিনের প্যাকেজে যে পরিমাণ ডেটা দেওয়া হয় তার সবটুকু ব্যবহার করা হয় না। সে কারণে মেয়াদ বাড়ালে গ্রাহকরা উপকৃত হবে।

বিটিআরসি সম্প্রতি প্যাকেজ ও ডেটার মূল্য-সংক্রান্ত গ্রাহক জরিপের ফলাফল থেকে জানায়, জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৬০০ ডেটা ব্যবহারকারীর ৪৪.৫ শতাংশ বিদ্যমান পাঁচটি মেয়াদ বহাল রাখার পক্ষে মত দেয়। অন্যদিকে ৫২.৯ শতাংশ গ্রাহক চায় ৭, ৩০ ও আনলিমিটেড মেয়াদের প্যাকেজ। বিটিআরসি তাদের ওই জরিপ অনুযায়ী ৩ ও ১৫ দিনের মেয়াদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানায়। বিষয়টি সম্পর্কে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, তিন দিনের প্যাকেজ তুলে দেওয়ায় গ্রাহকদের অতিরিক্ত দামে সাত দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করতে হবে। আর্থিক কারণে যারা কম মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাক ব্যবহার করে তাদের ওপর প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। অনেক ইন্টারনেট গ্রাহক ঝরে পড়তে পারে। এতে গ্রাহক, মোবাইল অপারেটর এবং সরকার- সবার ওপরই আর্থিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন ডেটা প্যাকেজ চালু হওয়ার পর গ্রাহকদের মধ্যে এর কেমন প্রভাব পড়ে, তা পর্যালোচনা করবে বলে জানিয়েছে বিটিআরসি। আমরা আশা করি, সরকার ও বিটিআরসি গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে এই নতুন প্যাকেজ রেগুলেশনটি পুনর্বিবেচনা করবে। বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকদের পক্ষে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৭০ শতাংশ গ্রাহকের স্বার্থ উপেক্ষা করে স্বল্পমেয়াদি ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিল করার যুক্তি হিসেবে বিটিআরসি বলেছিল, সাত দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজে গ্রাহকের সুবিধা বেশি হবে, প্রতারণা এবং খরচ কমবে। কিন্তু ফল এর উল্টো হয়েছে। এতে গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে। আমরা মনে করি, এই হঠকারী এবং অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত এখনো বাতিলের সময় রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত