পাঁচ দশকের ব্যবধানে বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তিনগুণ বেড়ে গেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও গবাদিপশু পালন খাত। যেখানে ১৯৭০-এর দশকে প্রতিবছর ১০০টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটত, সেখানে গত ২০ বছরে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪০০। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘দ্য ইমপেক্ট অব ডিজাস্টার অন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি’ শীর্ষক ফ্ল্যাগশিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য দিবসকে সামনে রেখে কৃষি ও পশুসম্পদ নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনটি গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে গত ৩০ বছরে বিশ্বে প্রায় ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের ফসল এবং গবাদিপশুর উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে হিসেবে বছরে গড় ক্ষতির পরিমাণ ১২৩ বিলিয়ন ডলার। এসব ক্ষতি বৈশ্বিক কৃষির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের সমান। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলো। এসব দেশের মোট কৃষি জিডিপির ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত তিন দশকে দানাদার শস্যে ক্ষতির পরিমাণ প্রতিবছর গড়ে ৬৯ মিলিয়ন টন। এই ক্ষতি ২০২১ সালে ফ্রান্সের সমগ্র শস্য উৎপাদনের সমান ছিল। আর ফল, শাকসবজি ও চিনিতে গড় ক্ষতি ৪০ মিলিয়ন টন। এসব ক্ষতির পরিমাণ জাপান ও ভিয়েতনামে ২০২১ সালে উৎপাদিত মোট ফল ও সবজির সমান। এছাড়া মাংস, দুগ্ধজাত দ্রব্য ও ডিমে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হয় ১৬ মিলিয়ন টন। এই ক্ষতির পরিমাণ মেক্সিকো ও ভারতে ২০২১ সালে এসব পণ্যের পুরো উৎপাদনের সমান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনটি পরামর্শও দেওয়া হয়েছে এফএও’র প্রতিবেদনে। এক. কৃষির সমস্ত উপখাতের ওপর বিপর্যয়ের প্রভাবের তথ্য ও তথ্যের উন্নতি করতে হবে; দুই. সকল স্তরে নীতি ও কার্যক্রম গ্রহণ করে দুর্যোগঝুঁকি কমাতে হবে; এবং তিন. স্থিতিশীলতার জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অপরদিকে ডেটা ইন ইমার্জেন্সিস মনিটরিংয়ের (ডিআইইএম) একটি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারি কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সে সময় বাংলাদেশে চাল ও খাবারের দাম বেড়েছিল ৩৫ শতাংশ। ৯০ শতাংশের বেশি কৃষক কৃষি উপকরণ সংগ্রহ করতে অসুবিধায় পড়েছিল। ধান রোপণের জন্য জনবল ও যন্ত্রপাতি, ফসল কাটা ও মাড়াইয়ের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছিল।