আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ার বিষয়ে কোনো বাধা নেই। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ নিশ্চিতভাবে পাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে এ কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি জানান, আইএমএফের বেশ কিছু শর্ত ছিল। এর মধ্যে ছয়টি শর্ত নিয়ে কাজ করেছি। শর্তের বেশকিছু সফল হয়েছে। কিছু পূরণ হয়নি। তবে বৈঠকে উভয়পক্ষ বেশকিছু বিষয় একমত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮১ মিলিয়ন (৬ কোটি ৮১ লাখ মার্কিন ডলার) আমরা পাব। ডিসেম্বর আইএমএফ তাদের বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ডিসেম্বরে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র। এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশকিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। দুয়েকটি জায়গায় ব্যর্থতা আছে। রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। তবে অনেক কিছু বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশের কথা ছিল যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করেছে। বিপিএমসিক্স অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। আইএমএফ বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এ ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। দেশে ডলার সংকট চলাকালে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এ সভার মধ্য দিয়ে মিশন শেষ হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ঋণের জন্য আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছিল, তার মধ্যে বেশ কয়েকটি পূরণ হয়েছে। তবে রিজার্ভ ও রাজস্ব আহরণের শর্ত পূরণ হয়নি। এর পেছনে দেশীয় ও বৈশ্বিক যেসব কারণ আছে, সেগুলো আইএমএফের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এরপরই ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। মুখপাত্র আরও বলেন, আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদনের পর ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। ঋণ অনুমোদনের পর বিজ্ঞপ্তিতে আইএমএফ জানায়, এক্সটেনডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) বা বর্ধিত ঋণসুবিধা ও এক্সটেনডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএএফএফ) বা বর্ধিত তহবিল সুবিধার আওতায় ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ৩৩০ কোটি মার্কিন ডলার এবং নতুন গঠিত তহবিল রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় আরও ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ১৪০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করা হয়েছে। অনুমোদনের পরপরই ঋণের প্রথম কিস্তি হিসেবে বাংলাদেশ ৪৭৬ মিলিয়ন বা ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার পায়। এদিকে আইএমএফ সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি আটকে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার কমে আসায় শ্রীলঙ্কা নীতি সুদহার ১০০ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে দেওয়ায় সংস্থাটি শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ আটকে দেয়।