ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশের ফল ও সবজি

একদশকে রপ্তানি বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে

একদশকে রপ্তানি বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে

ফল, সবজি ও সহযোগী পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানির ৩২ শতাংশ গিয়েছে ইউরোপে। অথচ, ২০১৩-১৪ তে কৃষিপণ্য রপ্তানির ৫৪.৮ শতাংশ গিয়েছিল ইউরোপে। অন্যদিকে, বর্তমানে কৃষিপণ্য রপ্তানির ৪৯ শতাংশ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য; যা একদশক আগে ছিল ৩০.৭ শতাংশ। উচ্চ রপ্তানি ব্যয়, গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসের (গ্যাপ) ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে গত একদশকে বাংলাদেশের ফল ও সবজি রপ্তানি কমেছে ৬৮.৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ফল, সবজি ও সহযোগী পণ্য রপ্তানিকারক সমিতি জানিয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যেখানে ফল ও সবজি রপ্তানি হয় ২৩৯.১৯ মিলিয়ন ডলারের; সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৭৪.৯৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। আবার, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই পণ্যগুলোর রপ্তানি ইউরোপীয় বাজারে যেমন কমেছে, তেমনি বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, এখন পর্যন্ত এ খাতের রপ্তানির মার্কেট পুরোটাই প্রবাসীদের টার্গেট করে হয়ে থাকে। তবে এই মার্কেটেও দেশের রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কম। কারণ, এদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের রপ্তানিমূল্য প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বেশি। ভারত যেখানে সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি করতে পারে, সেখানে বাংলাদেশের একমাত্র উপায় আকাশপথ। আবার আকাশ পথের খরচও প্রতিবেশী দেশটির তুলনায় বেশি। এছাড়া বিমানবন্দরে কুলিং হাউজ না থাকা, স্ক্যানার নিয়ে জটিলতা, দুই দফায় পণ্য স্ক্যানিংয়ের বিল নেওয়া, বিলম্বিত শিপমেন্টে পণ্যের মান খারাপ হওয়া, রপ্তানি মূল্য দেশে আসায় ধীরগতিসহ বেশকিছু বড় কারণে সামগ্রিক রপ্তানি বাড়ানো যাচ্ছে না বলে জানান রপ্তানিকারকরা। এছাড়া আমদানিকারক দেশগুলোর সুপার শপে এখনো বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের রপ্তানি হয় না। কারণ, উৎপাদন থেকে শুরু করে কৃষিপণ্য রপ্তানি পর্যন্ত ট্রেসিবিলিটির তথ্য সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসের (গ্যাপ) মাধ্যমে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যবস্থা না থাকায় এসব পণ্যে ইউরোপীয় স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে পারছে না। ইউরোপের সুপার শপে পণ্য রপ্তানির পূর্বশর্তই হলো গ্যাপ মেনে পণ্য উৎপাদন করা। এদেশে গ্যাপের মাধ্যমে কৃষি পণ্যের উৎপাদন না থাকায় এই ট্রেসিবিলিটি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও এখনো তৈরি হয়নি। এছাড়া প্যাকেজিং দুর্বলতা, পচনশীল এসব পণ্যের শেলফ লাইফ বাড়ানো এবং ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করার প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ না হওয়ায় রপ্তানি বাজার ধরে রাখা যাচ্ছে না। ফল, সবজি ও সহযোগী পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং রপ্তানিকারক মো. মনসুর বলেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশের রপ্তানিকারকদের তুলনায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় অনেক পিছিয়ে। তিনি বলেন, ‘পণ্যের বাড়তি দাম, স্ক্যানার নিয়ে জটিলতা, বিমানবন্দরে কুলিং রুম না থাকা, সময়মত শিপমেন্ট জটিলতা, বাড়তি এয়ার ফ্রেইট চার্জ এবং রপ্তানি মূল্য দেশে আসতে বিলম্ব হওয়ার মতো কারণগুলোতে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের মুম্বাই থেকে দুবাইয়ে সমুদ্রপথে পণ্য পাঠাতে সময় লাগে চার দিন। যেখানে আমাদের লাগে ৩০ দিন। পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট না থাকায় আমরা সমুদ্রপথ ব্যবহারই করতে পারি না।’ সমিতির অ্যাডভাইজর মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘উৎপাদন থেকে শুরু করে শিপমেন্ট পর্যন্ত প্রতিটি ধাপেই আমরা সমস্যার মুখে পড়ি।’ কৃষিপণ্য হিসেবে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফলমূল ও পান রপ্তানি করা হয়। করলা, বেগুন, ওকড়া, কাঁচামরিচ, সবুজ পেঁপে, সবুজ কলা, মুলা, মিষ্টি আলু, ফুলকপিসহ ৫৪ ধরনেরও বেশি সবজি রপ্তানি করা হয়। ফলের মধ্যে কাঁঠাল, আনারস, লিচু, আম, লেবু, পেয়ারা, ড্রাগন ফলসহ ৩৪ ধরনের ফল রপ্তানি করা হয়। রপ্তানিকারকরা জানান, ইউরোপের মধ্যে প্রধানত যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও রাশিয়াতে রপ্তানিত করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইন। কিছু পণ্য কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং শ্রীলঙ্কায়ও রপ্তানি করা হয়। এদিকে, বাংলাদেশ থেকে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ১৬১ মিলিয়ন ডলার; ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত