কৃষির আয়েই বেড়েছে গ্রামীণ নারীদের মর্যাদা
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বরিশাল ব্যুরো
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামের শ্যামল ব্রহ্মর সঙ্গে ১৯৯৩ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় মাদারীপুরের শহুরে মেয়ে রিতা ব্রহ্মর। শহুরে মেয়ে হওয়ায় শুরুতে গ্রামের পরিবেশ ও মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে চলাটা খুব সহজ ছিল না রিতার জন্য। টানাপড়েনের সংসারে জীবনে সংগ্রাম করে এগিয়ে চলার তাগিদে সবসময় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তিনি। যার দরুণ ত্রিশ বছরের মাথায় গিয়ে আজ পরিপূর্ণ সুখী এক নারী রিতা ব্রহ্ম। দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে মাস্টার্সের ছাত্র আর অর্নাস পাস করিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি একাধিক দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন, দিচ্ছেন সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির সভাপতি হয়ে নেতৃত্ব। আর এই রিতার মতো করে সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির মাধ্যমে আশপাশের পুরুষ ও নারীরাও এখন এগিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের স্বপ্নের জাল বুনতে শিখেছেন এবং তার ব্যবহারও করছেন যথার্থ। জানা গেছে, সারা বাংলা কৃষক সোসাইটি যৌথভাবে কেনিয়ার একটি কৃষক সংগঠনের সঙ্গে এ বছর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কৃতিত্ব পুরস্কার লাভ করেছে। কৃষি ক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য সংগঠন, ব্যক্তি বা এফএও এর টিমকে প্রতি বছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। বিশ্বময় এফএও’র কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যে সব উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বা মানুষের জীবন ও জীবিকায় উজ্জ্বল পরিবর্তন আনে, সেই কর্মসূচি বাস্তবায়নকারীকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
তিন দশক আগে মাত্র একটি বোম্বাই মরিচ গাছ লাগিয়ে তা থেকে এক বছরে কয়েক হাজার টাকা উপার্জন করে কৃষিতেই নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির সভাপতি রিতা ব্রহ্ম বলেন, অনেক সংগ্রাম করে নিজেকে আজ একজন স্বাবলম্বী নারী হিসেবে সমাজের প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। শুরুর দিকে শ্বশুর বাড়িতে এসে শহুরে মেয়ে হওয়ায় গ্রামের কাদামাটির রাস্তায় ঠিকভাবে হাঁটতেও পারতাম না। পানি আনতে গিয়ে কত যে কলস ভেঙেছি তার হিসাব নেই। শ্বশুরের যৌথ পরিবারের মাঝে নিজের অবস্থান করে নিতেও সময় লেগেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই যৌথ পরিবার থেকে যখন নিজের পরিবার আলাদা হয়, তখনও খুবই খারাপ দিন কাটাতে হয়েছে। অন্যের কাছ থেকে চাল ধার আনতে হয়েছিল খাওয়ার জন্য, তারপর এমনও সময় গেছে মেয়েটিকে বুকের মধ্যে নিয়ে বসে থাকতাম কারণ টিন বেয়ে ঘরের ভেতর বৃষ্টির পানি পড়তো। সেই দিন ঘুরে যাবে, বাড়িতে পাকা ঘর হবে এ যেন স্বপ্ন ছিল, আজ যা বাস্তব। রিতা বলেন, পাশের বাড়ির পলি আপা একদিন বললেন, তুমি তো শিক্ষিত আছো, ঘরে বসে না থেকে কিছু একটা করো।
আর সেদিন থেকে কিছু একটা করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে হয়ে কাজ করেছি। কিছুদিন পরেই কৃষক দম্পতিদের নিয়ে গড়ে ওঠা রাকুদিয়া আইপিএম ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হই। আর সেই ক্লাব সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত হয়। তারপর থেকেই যেন সব কিছু ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরে এসেছেন বলে জানালেন রিতা। তিনি বলেন, এই ক্লাবে যুক্ত হয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহযোগিতাসহ নানা কিছু পেতে শুরু করি। আমরা শুধু প্রশিক্ষণই নেইনি, প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের আশপাশের নারী-পুরুষ কৃষকদেরও প্রশিক্ষিত করেছি, ঐক্যবদ্ধ করেছি। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন যন্ত্রের সঙ্গে নিজেদের পরিচয় করিয়েছি আর তার ব্যবহার নিশ্চিত করে উপার্জনের পথও সুগম করেছি।