দেশের বেকার জনগোষ্ঠী কমে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটির ত্রৈমাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। অর্থাৎ, সেপ্টেম্বর শেষে বেকারত্বের হার কমে ৩ দশমিক ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। বিবিএসের ত্রৈমাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে বেকার কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৩০ হাজারে। এর আগের প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দেশের বেকার সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ। অর্থাৎ, তিন মাসের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। সেপ্টেম্বর শেষে বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুরুষ সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে বেকারদের মধ্যে ১৬ লাখ পুরুষ আর ৮ লাখ ৩০ হাজার নারী। বিবিএস বলেছে, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই, যারা গত সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি, কিন্তু কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন। সর্বশেষ প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে দেশে বেকারত্বের হার কমে ৩ দশমিক ৩১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে জুন প্রান্তিকে বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। বেকার কমলেও গত তিন মাসে দেশের শ্রমশক্তি বেড়েছে। বর্তমানে দেশের শ্রমশক্তিতে যুক্ত রয়েছে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার জন। জুন শেষে এর পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৩২ লাখ ১০ হাজার। শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী ও বেকার জনগোষ্ঠীর মোট সমষ্টিকে বোঝায়।
কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী বলতে বোঝায়, গত সাত দিনে যারা কমপক্ষে ১ ঘণ্টা কাজ করেছেন বা কমপক্ষে একটি মুরগি পালন করেছেন। সে হিসেবে দেশে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীও বেড়েছে। ২০২৩ সালের ৯ মাস শেষে দেশে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার জন। এর আগে জুন শেষে এ হার ছিল ৭ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার। তবে শঙ্কার বিষয়, দেশের শ্রমশক্তির বাইরে অবস্থিত জনগোষ্ঠীর পরিমাণ বাড়ছে। শ্রমশক্তির বাইরে জনগোষ্ঠী বলতে বোঝায়, যারা কর্মে নিয়োজিত নন আবার বেকার হিসেবেও বিবেচিত নন। বিশেষ করে ছাত্র, অসুস্থ, বয়স্ক, কাজ করতে অক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত ও গৃহিণীরা এ হিসেবের অন্তর্ভুক্ত। বিবিএস বলছে, গত তিন মাসে এমন জনগোষ্ঠী বেড়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার জন। সেপ্টেম্বর শেষে শ্রমশক্তির বাইরে জনগোষ্ঠী ৪ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার এবং জুন শেষে এ হার ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ ২০ হাজার জন। এছাড়া শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর হারা কমে যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। জুন শেষে এ হার ছিল ৬০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। অথচ ২০২২ সাল শেষে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ছিল ৬১ দশমিক ২০ শতাংশ। এর আগে বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়েছিল। শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে আগের তিন মাস, অর্থাৎ ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় দেশে বেকার লোকের সংখ্যা ২ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছিল। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে দেশে বেকার ছিলেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার মানুষ। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে সেই সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ২০ হাজার। প্রথম প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ করেছে, সেখানে এ চিত্র পাওয়া গেছে। শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজার বেকার মানুষের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৭ লাখ ১০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার। অন্যদিকে শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশে মোট বেকার মানুষের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৯০ হাজার এবং নারীর সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার। জরিপের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে দেশে বেকারত্ব ছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। পুরুষের ক্ষেত্রে তা ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে তা ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এর প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) ফলাফল অনুযায়ী, দেশের শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত মোট জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৩৬ লাখ। এছাড়া কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠী বর্তমানে ৭ কোটি ১১ লাখ। শ্রমশক্তির বাইরে থাকা জনগোষ্ঠী ৪ কোটি ৬৩ লাখ; শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৬১ দশমিক ৩৭। অর্থনৈতিক খাত অনুযায়ী কৃষিতে নিয়োজিত আছে ৩ কোটি ১৯ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২২ লাখ, সেবা খাতে ২ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এ ছাড়া দেশের যুব শ্রমশক্তি ২ কোটি ৭৩ লাখ। শ্রমশক্তিতে নিয়োজিত মোট জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ৩৬ লাখ। সেই হিসাবে দেশের মোট শ্রমশক্তির ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই, যারা গত সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টাও কাজ করেনি, কিন্তু গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ খুঁজেছেন। তবে বেকারের এ সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক আছে।