লাগামহীন আলু-পেঁয়াজের বাজার
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ায় মাত্র দুই দিনেই পণ্যটির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ দেশীয় উৎপাদনে জোগান দেয়া আলুর বাজার বৃদ্ধির কারণ খোঁজে পাচ্ছে না ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আলুর দাম। দেড় মাস আগেও ৪০ টাকায় বিক্রি হওয়া আলুর কেজি এখন সর্বনিম্ন ৭০ টাকা, যা সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণ। এদিকে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪৫ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়, যা গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ায় মাত্র দুই দিনেই পণ্যটির বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ দেশীয় উৎপাদনে জোগান দেয়া আলুর বাজার বৃদ্ধির কারণ খোঁজে পাচ্ছে না ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় সরবরাহ বাড়াতে এবং দাম স্থিতিশীল রাখতে আলু আমদানির অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। খাতুনগঞ্জের কাঁচা ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী মেসার্স গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বলয় কুমার পোদ্দার বলেন, খাতুনগঞ্জে পাইকারি পর্যায়ে আজ প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা তিন দিন আগেও যথাক্রমে ৮০ ও ৯০ টাকার নিচে বিক্রি হয়েছে।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন বাজার ও মুদি দোকানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ১২০ ও দেশি পেঁয়াজ ১৪০ টাকায় বিকিকিনি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠন হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ মিয়া বলেন, পেঁয়াজ আমদানির বড় অংশ হয় ভারত থেকে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ভারতের ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় গত শনিবার প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলার নির্ধারণ করেছে। এর আগে, গত আগস্টে পেঁয়াজের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ বাড়াতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের ওপর ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেছিল ভারত। ফলে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে এবং দেশে পেঁয়াজের বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বেড়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী। কাঁচাপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জেএম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, ভারত সরকার নতুন করে পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার ফলে দেশের বাজারে তার প্রভাব বেশি পড়েছে। ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের দাম বাড়তি। তাই ভবিষ্যতে আমদানিতে খরচ আরও বাড়তে পারে। অথচ বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা এবং আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সরকারি সংস্থা মাঠে নামিয়েও নির্ধারিত সেই দাম বাজারে কার্যকর করা যায়নি। উল্টো দেড় মাস পরে দাম এখন আরো বেড়েছে। বেধে দেওয়া দামের দ্বিগুণ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ ও আলু।
গতকাল সোমবার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান অস্থায়ী বাজার থেকে আলু কিনছিলেন স্কুল শিক্ষিকা নুসরাত জাহান। এই ক্রেতা জানান, এক সপ্তাহ আগেও ভ্যান থেকে প্রতি কেজি আলু কিনেছি ৫০ টাকায়, যা আজকে কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকায়। ওই সময় বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আলু সরবরাহে সংকট রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য সবজির দাম বাড়তি থাকার কারণে আলুর চাহিদা বেড়েছে। সে কারণেও দাম বেড়েছে। পাইকারি পর্যায়ে রিয়াজুদ্দিন বাজার থেকে তাদের প্রতি কেজি আলু ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী। এদিকে আগ্রহী আমদানিকারকদের অনুমতি নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর বার্ষিক চাহিদা ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ১.১২ কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়। তবে কোল্ড স্টোরেজে আলু সংরক্ষণে ঘাটতি এবং বীজের জন্য আলু প্রয়োজন হওয়ায় আরো আলু উৎপাদন প্রয়োজন। আলুর উৎপাদন কম হওয়া নিয়ে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সরকার এই বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ। কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, যদিও সরকার এ বছর ১ কোটি টনের বেশি আলু উৎপাদনের কথা জানিয়েছে, বাস্তবে ৮ থেকে ৮.৫ মিলিয়ন টনের বেশি আলু উৎপাদন হয়নি। এর আগে গত ৭ অক্টোবর অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আলু আমদানির পরিকল্পনার বিপক্ষে ছিল কৃষি মন্ত্রণালয়।