ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সংসদে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ পাস

সংসদে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ পাস

শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধা বৃদ্ধিসহ বেশকিছু সংশোধনী এনে জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল, ২০২৩’ পাস হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন এবং ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে কণ্ঠভোটে এটি পাস হয়। এর আগে, বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়।

বিলে বলা হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের লে-অফ করা সত্ত্বেও মালিককে তাদের জন্য রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে, এবং স্বাভাবিক কর্মসময়ে লে-অফকৃত শ্রমিকদের মধ্যে যারা কাজের জন্য হাজিরা দেবেন, তাদের নাম এতে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে, লে-অফকালীন অন্য কোনোভাবে শ্রমিক রেজিস্টার সংরক্ষণ বা শ্রমিক রেজিস্টারের বাইরের কোনো শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না। বিলে আরো বলা হয়েছে, কোনো শ্রমিককে কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যায়িত শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা বা অব্যাহত ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে চাকরি থেকে ডিসচার্জ করা যাবে। তবে শর্ত থাকে যে, কর্মকালীন দুর্ঘটনা ও পেশাগত রোগের কারণে কোনো শ্রমিক তার বর্তমান কাজে অক্ষম হলে, তার ডিসচার্জের পাওনা পরিশোধপূর্বক মালিক, শ্রমিকের সম্মতিক্রমে, তাকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী অন্য কোনো কাজে নিয়োগ করতে পারবেন। বিলে বলা হয়েছে, যদি কোনো পঞ্জিকা বৎসরে কোনো শ্রমিককে নিরবচ্ছিন্নভাবে ৪৫ দিনের অধিক সময়ের জন্য লে-অফ করা হয় এবং পরে লে-অফের সময় যদি আরও ১৫ দিন বা এর বেশি বাড়ানো হয়, তা হলে ওই শ্রমিককে, শ্রমিক এবং মালিকের মধ্যে ভিন্নরূপ কোনো চুক্তি না থাকলে, পরবর্তী প্রত্যেক ১৫ বা তদূর্ধ্ব দিনসমূহের লে-অফের জন্য বিধান অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এদিকে, প্রত্যেক প্রসূতি তার মালিকের নিকট থেকে তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের অব্যবহিত পূর্ববর্তী অন্যূন ২১ দিনসহ সর্বমোট ১২০ দিনের প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন এবং তার মালিক তাকে এই সুবিধা প্রদান করতে বাধ্য থাকবেন বলে বিলে বলা হয়েছে। তবে শর্ত থাকে যে, কোনো প্রসূতি এই ধরনের সুবিধা পাবেন না যদি না তিনি তার মালিকের অধীন তার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পূর্বে অন্যূন ৬ মাস কাজ করে থাকেন। এছাড়া কোনো প্রসূতিকে এ ধরনের সুবিধা দেয়া হবে না, যদি তার সন্তান প্রসবের সময় তার দুই বা ততধিক সন্তান জীবিত থাকে। তবে এক্ষেত্রে তিনি কোনো ছুটি পাওয়ার অধিকারী হলে তা তিনি পাবেন। বিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রসূতি এ আইনের অধীন প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হলে তিনি তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ এবং কখন তিনি ছুটিতে যেতে ইচ্ছুক তা উল্লেখপূর্বক যে কোনো দিন মালিককে লিখিত বা মৌখিকভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং এই নোটিশে তার মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই সুবিধা যিনি গ্রহণ করবেন তার নামও উল্লেখ থাকবে।

আগে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরযুক্ত বা তাদের সমর্থনসহ আবেদন প্রয়োজন হতো।

সংশোধিত এ বিলে সেটিকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এখন শ্রমিকের সংখ্যা যদি ৩ হাজারের কম হয়, তাহলে ২০ শতাংশের সমর্থন লাগবে। আর ৩ হাজারের বেশি হলে সেটি ১৫ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে এবং আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে সেখানে তারা ট্রেড ইউনিয়ন করতে পারবেন। এছাড়া গ্রুপ অব কোম্পানি হলে ২০ শতাংশ শ্রমিক চাইলে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে। বিলে আরো বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি (প্রতিবন্ধী) নির্বিশেষে কোনো ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না। বিল পাসের প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশ নেন সংসদে বিরোধী দলের সদস্য ফখরুল ইমাম, রওশন আরা মান্নান, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, রুস্তম আলী ফরাজী, কাজী ফিরোজ রশীদ ও স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত