তৈরি পোশাক খাতে বাড়ছে অস্থিরতা

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কয়েক দিনে রাজধানীসহ গাজীপুর, আশুলিয়া ও সাভারে ২৫০ কারখানায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় হুমকির মধ্যে পড়েছে তৈরি পোশাক খাত। ন্যূনতম মজুরিকে কেন্দ্র করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের তাণ্ডবের মুখে তিন দিন ধরে অন্তত ৬৫০ পোশাক কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুরে ২৩৫টি, আশুলিয়ায় ৩৫টি এবং গাজীপুরে ৩৮৬টি। এতে স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর- এই ৩ মাসে বিদেশি ক্রেতারা সাধারণত নতুন অর্ডার প্লেস করেন। এখন শ্রমিক আন্দোলনের নামে যেভাবে কারখানা ভাঙচুর, জ্বালাওপোড়াও হচ্ছে, তাতে হুমকির মুখে পড়বে এ খাত। এমনিতে গেল চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিশ্ববাজারে রপ্তানি কমেছে তৈরি পোশাকের। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ১৪৪ কোটি মার্কিন ডলারের। এখন যুক্ত হয়েছে ন্যূনতম বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন। পাশাপাশি চলছে রাজনৈতিক কর্মসূচি-অবরোধ। এতে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এ শিল্পে। জানতে জাইলে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের নামে একটি গোষ্ঠী এ খাতকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। এতে শ্রমিক, গার্মেন্ট মালিক, দেশ সব পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মনে রাখতে হবে তৈরি পোশাকই একমাত্র খাত যার ওপর ভিত্তি করে দেশের অর্থনীতি মজবুত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘চলতি মাস থেকে আগামী ডিসেম্বর মাসে বিদেশি ক্রেতারা সাধারণত নতুন অর্ডার প্লেস করেন। এখন শ্রমিক আন্দোলনের নামে যা চলছে তাতে বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশ আসে যে খাত থেকে, সেটি হলো তৈরি পোশাক খাত। কিন্তু বেতনকে কেন্দ্র করে গার্মেন্ট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলা কাম্য নয়। পোশাক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে বড় ধাক্কা আসবে অর্থনীতিতে। এমনিতেই আমরা ডলার সংকটে আছি। গার্মেন্ট ডলার আয়ের অন্যতম একটি খাত। এ মুহূর্তে পোশাক খাত টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’ সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এরই মধ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচি চলছে। ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার আগে শ্রমিক আন্দোলনের পেছনে কারো ইন্ধন থাকতে পারে। বিগত সময়ে মজুরি ঘোষণার পর আন্দোলন হতো। এবার মজুরি ঘোষণার আগেই কেন আন্দোলন তা খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে কোনো পক্ষ যেন নিরীহ শ্রমিকদের ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার। এমনিতেই বিশ্ব মন্দার কারণে সংকটের মধ্যে গার্মেন্টশিল্প। রপ্তানি আয় ধরে রাখা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হলে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মৌসুমের অর্ডার কমে যেতে পারে বলে শঙ্কায় আছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ)। এদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের অর্ডার বাড়াতে তৎপর ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়ার মতো প্রতিযোগী দেশগুলো। এ অবস্থায় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ধস ঠেকাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান ব্যবসায়ীদের। পরিস্থিতি নিয়ে এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা। তারা বৈঠক করেছেন মজুরি বোর্ডের সঙ্গেও। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এমনিতে ডলারের সংকট চলছে। আর দেশের ডলার আয়ের প্রধান দুটি খাতের মধ্যে অন্যতম একটি রপ্তানি। যার বড় অংশ আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।