দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে ও বিদ্যমান ডলার সংকট মোকাবিলায় সরকার বিদেশি ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় বাণিজ্যিক ঋণ নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসাবে ভারত ও সৌদি আরব থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আসন্ন প্রধানমন্ত্রীর সৌদি সফরের সময় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া ভারতের সঙ্গেও এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আরো কয়েকটি বিদেশি বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অব্যাহত গতিতে কমছে। কোনোক্রমেই রিজার্ভে পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। কঠোরভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেও ডলার সংকট সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। ডলারের দাম বাড়িয়েও এর প্রবাহ বাড়ানো যাচ্ছে না। ব্যাংকে ডলারের দাম বাড়ালে খোলা বাজারেও বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। এদিকে গত ২ বছরের বেশি সময় ধরে রিজার্ভ কমছে। ২০২১ সালের আগস্টে গ্রস রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে ওঠেছিল। এরপর থেকে রিজার্ভ কমছে। গত বৃহস্পতিবার গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪৩ কোটি ডলারে। আলোচ্য সময়ে রিজার্ভ কমেছে ২ হাজার ১৬৩ কোটি ডলার। অর্থাৎ, ২ বছরে রিজার্ভ প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। রিজার্ভের বড় অংশই ব্যয় হয়েছে জ্বালানি উপকরণসহ অত্যাবশকীয় পণ্য আমদানিতে। এদিকে রিজার্ভ বাড়ানোর প্রধান উপকরণ রপ্তানি আয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। অক্টোবরে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। ওই মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ৩৭৬ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ৪৩১ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি ডলারের ঘরে ছিল। এবার তা ৩০০ কোটি ডলারের ঘরে চলে এলো।
জুনে সর্বশেষ রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছিল। রিজার্ভ বাড়ানোর দ্বিতীয় উপকরণ রেমিট্যান্সের গতিও নিম্নমুখী। যদিও অক্টোবরে গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে কমেছে সাড়ে ৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ২ শতাংশ। গত মাসে রেমিট্যান্স বেড়ে ১৯৮ কোটি ডলার এলেও আগামীতে শঙ্কা রয়েছে।
কারণ, ওমানে ভিসা দেওয়া বন্ধ, সুইডেনে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া মন্দায় প্রবাসীরা বিদেশে কাজের সংস্থান করতে পারছেন না। ফলে অনেকে রেমিট্যান্সও পাঠাতে পারছেন না। বৈদেশিক বিনিয়োগ, অনুদান ও অন্যান্য আয়েও চলছে মন্দা। সব মিলে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে গেছে। এ কারণে রিজার্ভে চাপ বাড়ছে। এই চাপ কমাতে ও ডলারের প্রবাহ বাড়াতে সরকার বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর অংশ হিসাবে ভারতের সঙ্গে এখন আলোচনা চলছে।