ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২৫০০ কোটি টাকার বাজার হস্ত ও কারুশিল্পের

২৫০০ কোটি টাকার বাজার হস্ত ও কারুশিল্পের

দেশে হস্ত ও কারুশিল্পের ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার বাজার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে এগিয়ে আছে বাঁশ ও বেত শিল্প। অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই খাতে; সংখ্যায় যা ৩২ হাজার ২২৪টি, অর্থাৎ মোট প্রতিষ্ঠানের ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা হস্ত ও কারুশিল্প জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। মূলত বিবিএস সিঙ্গল-স্টেজ স্ট্যাটিফাইড র‌্যান্ডম স্যাম্পলিং (ক্যাপি) পদ্ধতির মাধ্যমে ৭ হাজার ৩১০টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই জরিপ চালানো হয়। দেশে বর্তমানে হস্ত ও কারুশিল্পের মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৩ হাজার ৫৪২টি। এর মধ্যে পরিবারভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ৭১ হাজার ৭৫৯ এবং মালিকানাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৭৮৩টি। বিবিএসের জরিপ বলছে, হস্ত ও কারুশিল্পে বাঁশ ও বেতের পর রয়েছে মৃৎপাত্র ও টেপা পুতুল শিল্প, যা ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। নকশিকাঁথাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, কুরুশ কাঁটার পণ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ ও শীতল পাটির কার্পেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এই খাতে মোট শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৪৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬২ হাজার ১১ জন ও নারীর সংখ্যা ৮০ হাজার ৪৫৩ জন। পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৪২ জন বেশি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়নি। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, ঋণের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হচ্ছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা। জরিপের তথ্য মতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ নিয়েছে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। কোনো ধরনের ঋণ নেয়নি ৭০ দশমিক ১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। ৮৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে এনজিও থেকে। ব্যাংক থেকে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, এসএসই ফাউন্ডেশন থেকে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে। বেসরকারি ফাউন্ডেশন থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশ ও জয়িতা ফাউন্ডেশন থেকে ০ দশমিক ১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে। হস্ত ও কারুশিল্প নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজ করেন উদ্যোক্তা নবনী চৌধুরী। তিনি ৩ বছর ধরে ‘নবনীস প্লেস’ নামের একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেননি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তা হিসেবে ঋণ দেওয়ার মতো কোনো এজেন্সি বা সংস্থা পাইনি। সর্বোপরি লোন নিতে গেলে অনেক ঝামেলা হয়। তাই লোন নেওয়ার চেষ্টা করিনি।’ প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে গিয়ে বিবিএস বলছে, জরিপকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট কর্মসংস্থান ব্যয় ৯৯৬ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঁচামাল বাবদ ব্যয় ৭০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ৩ হাজার ৬০৯ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ রয়েছে। তাদের উৎপাদিত পণ্যমূল্য ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানের কর্মসংস্থানের ব্যয় গড়ে ১৩৫ কোটি টাকা। হস্ত ও কারুশিল্পের চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবিএস তাদের জরিপে বলেছে, মোটা দাগে পাঁচটি চ্যালেঞ্জের কথা। জরিপকৃত প্রতিষ্ঠানের ৮২ দশমিক ২ শতাংশ বলছে, তাদের পুঁজির অভাব রয়েছে। এই খাতে ক্রেতার অভাবের কথা বলছে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। পণ্য উৎপাদন করতে গিয়ে কাঁচামালের অভাবের কথা বলছে ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আর বিপণনজনিত সমস্যার কথা বলছে ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত