শ্রমিক বিক্ষোভ
চাপ সামলাতে ভিন্ন কৌশলে পোশাক মালিকরা
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে দেশের গার্মেন্ট শ্রমিক ও ইপিজেড শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি মাসের যে কোনো সময় এই নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করবে সরকার নির্ধারিত ওয়েজ বোর্ড কমিটি। গার্মেন্ট মালিক ও সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে নতুন কাঠামোয় শ্রমিকদের গড় বেতন ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। আর এই বাড়তি বেতনের চাপ সামলাতে অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে মালিকপক্ষ। কারণ, এর আগে বাড়তি বেতনের হঠাৎ চাপ সামলাতে না পেরে একাধিক গার্মেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার নজিরও আছে। ঢাকাভিত্তিক পলমল গ্রুপের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর পর শ্রমিকদের বেতন বাড়বে, এটা জানা কথা। তাই গার্মেন্টশিল্পে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের আগে থেকেই মালিকপক্ষ একটি পরিকল্পনা তৈরি করে রাখে, যাতে হঠাৎ করে বেতন ৫০ কিংবা ৬০ শতাংশ বাড়লেও বিপদে পড়তে না হয়। এজন্য বেশিরভাগ কারখানা নতুন নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে অনেক আগেই। এছাড়া অর্ডারের ধরন অনুযায়ী আগে থেকেই অপ্রয়োজনীয় শ্রমিক কমানো শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি যতটা সম্ভব অটোমেশনে ব্যয় বাড়িয়েছে বেশিরভাগ কারখানা। বিভিন্ন কারখানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা যায়, সাধারণত যেসব এলাকায় শ্রমিক আন্দোলন বেশি হয়, সেসব এলাকায় পুরুষ কর্মী কমিয়ে নারী কর্মী বাড়ানো হয়েছে ধীরে ধীরে। এতে পুরুষ গার্মেন্টকর্মী বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের সনেট টেক্সটাইল গ্রুপের পরিচালক গাজী মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বলেন, ‘এই সময় অর্ডার তেমন নেই। ফলে শ্রমিকদের ওভারটাইমও নেই। তার পরও আমার গার্মেন্টে প্রতি মাসে বেতন আসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হলে এটা প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকায় উন্নীত হবে। এভাবে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে। বিশ্বে যুদ্ধকালীন অর্থনৈতিক মন্দার সময় এই ওয়েজ মালিকপক্ষের জন্য বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে।’ টিকে থাকার পরিকল্পনা হিসেবে বিকেএমইএর এই পরিচালক বলেন, ‘নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পর আন্তর্জাতিকভাবে প্রচার হলে আমরা ক্রেতাদের সিএম কস্ট বাড়ানোর জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করব। এর আগেও অনেক বায়ার এভাবে দর বাড়িয়েছে।’ তবে সব পরিকল্পনা পোশাকের অর্ডারের ওপর নির্ভর করছে বলে তিনি জানান। চট্টগ্রাম ইপিজেডে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত তাঁবু উৎপাদনকারী দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান এইচকেডি ইন্টারন্যাশনালের উপমহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, ‘বর্তমানে অর্ডারের যে পরিস্থিতি, তাতে সারভাইভাল প্ল্যান বলতে তেমন কিছু নেই। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের জন্য একমাত্র সহায় ডলারের বর্তমান রেট। ২০১৮ সালে যখন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন মার্কিন ডলারের রেট ছিল ৮৫ টাকা। বর্তমানে এই রেট ১১২ টাকা, বৃদ্ধির হার ৩১ শতাংশের বেশি। মালিকপক্ষের কাছে বাড়তি বেতনের যে চাপ, তা কমানোর দ্বিতীয় যে উপায় আছে তা হচ্ছে উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে কিছু অদক্ষ বা কম দক্ষ কর্মী ঝরে যাবে।’ গার্মেন্টশিল্পে নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে চলমান শ্রমিক আন্দোলনে ঢাকার আশুলিয়ার সিন সিন অ্যাপারেল পড়েছে বিপাকে। গত এক সপ্তাহে সেভাবে কোনো কাজই করতে পারেনি কারখানাটি। অথচ স্পেন ও সুইডেনে এইচঅ্যান্ডএম ও সেলসব্যারির শিপমেন্ট পিছিয়ে যাচ্ছে আন্দোলনের কারণে। প্রতিষ্ঠানটির কারখানাপ্রধান একরামুল কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাড়তি বেতনের চাপ সামলাতে অনেকেই হেল্পার কমাচ্ছে। এভাবে চললে একসময় অপারেটর পাওয়া যাবে না। কারণ এই হেল্পাররাই কাজ শিখে একসময় অপারেটর হয়। আমরা চেষ্টা করছি মোটিভেশন করে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে। এজন্য আমাদের বিশাল আইই (ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগ শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে। কারণ শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে পারলে বেতন বেশি দিলেও তা পুষিয়ে যাবে।’