পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য

দেশে মোট পেশাজীবী ৭ কোটি ১০ লাখ

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ডলার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে দেশে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। রিজার্ভও তলানিতে। ঋণপত্র খুলতে না পারায় গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন চলছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ দুই-ই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশের ৪ কোটি পেশাজীবীর ওপর। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে অনেক পেশাজীবীর দৈনন্দিন আয় বন্ধ বা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসারে পেশাজীবীদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো- কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, সেপ্টেম্বর শেষে দেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত জনগোষ্ঠী ৭ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে শুধু কৃষিতে নিয়োজিত আছে ৩ কোটি ১২ লাখ জনগোষ্ঠী। আর শিল্পে নিয়োজিত ১ কোটি ২১ লাখ ও সেবা খাতে ২ কোটি ৭৭ লাখ মানুষ কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। স্বনির্ভর পেশা হওয়ায় কৃষিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীকে বাদ দিলে শিল্প ও সেবা খাতে কর্মে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৪ কোটি জনগোষ্ঠী। দেশের দৈনিক শ্রমজীবী মানুষও সেবা খাতের অংশ। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শিল্প ও সেবা খাতের এসব পেশাজীবীর নিয়মিত আয় হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে পরিবহণ, দোকানকর্মী ও খেটে-খাওয়া মানুষের আয় আছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। কারণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে এসব পেশার মানুষের দৈনন্দিন আয় থমকে থাকে। এছাড়া যেসব পেশাজীবীর আয় প্রতিষ্ঠাননির্ভর, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় তারাও থাকেন শঙ্কায়। রাজনীতির এ চলমান আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে পরিবহণ খাত। যাত্রী পরিবহণ কিংবা পণ্য পরিবহণের সবচেয়ে বড় ভূমিকা এ খাতের। কিন্তু হরতাল-অবরোধে পরিবহণ বন্ধ রাখলে এর সঙ্গে যুক্ত চালক ও চালকের সহযোগীদের দৈনিক আয় বন্ধ থাকে। এছাড়া পণ্য সরবরাহও বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কাই বেশি। হরতাল অবরোধে দেশের নানান ছোট ছোট পেশায় নিয়োজিত মানুষের রোজগারও বন্ধ থাকে। যারা বেশিরভাগই দৈনিক আয়ে জীবনযাপন করেন। এদিকে অক্টোবরের শেষদিকে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে যোগ হয়েছে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলন। পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে দেশের এ প্রধান রপ্তানি খাতে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন কারখানার মালিকরা। গত অক্টোবরে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা গত মাস থেকে শুরু হলেও দেশের অর্থনীতিতে দৈন্যদশা শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরপরই। ডলার সংকটের জেরে আমদানিনির্ভর সব পণ্যেই দাম আকাশছোঁয়া। ডলার, কাঁচামাল ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অনেক কোম্পানি এরই মধ্যে লোকসানে পড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে উন্নত দেশগুলোতে চাহিদা কমায় দেশের রপ্তানিনির্ভর খাতগুলোতেও অস্থিরতা রয়েছে। কয়েকটি খাতে কর্মসংস্থান যে হুমকির মুখে পড়েছে, তা বিবিএসের জুনে প্রকাশিত শিল্প উৎপাদন সূচকের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হওয়া যায়। মধ্য ও মাঝারি মানের শিল্পের মধ্যে রাইস মিলগুলোর উৎপাদন কমেছে গত বছরের তুলনায় ২৪ শতাংশের বেশি, চামড়া শিল্পের উৎপাদন কমেছে ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ফুটওয়্যারের উৎপাদন কমেছে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। জুনের পর পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই- সেপ্টেম্বর) শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র খোলা কমেছে ২২ শতাংশের বেশি। কয়লা, ক্লিংকারসহ অন্যান্য মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে প্রায় ২৮ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি ২৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে ঋণপত্র খোলার হার গত বছরের তুলনায় কমেছে ১৮ শতাংশ। ঋণপত্র খুলতে না পারলে আমদানিনির্ভর এ দেশে বিনিয়োগ কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। আর বিনিয়োগ কমলে প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানেও। তবে কৃষকরা যে এ অস্থিরতার বাইরে রয়েছেন তাও বলা যায় না। বিবিএসের গত জুন পর্যন্ত শিল্প সূচকে দেখা যায়, বছরের ব্যবধানে দেশে সারের উৎপাদন কমেছে ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ। বর্তমানে কর্মে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ যদি কাজ হারিয়ে ফেলেন বা কর্মস্থলে আয় কমে যায়। ঘরে ফিরলেই চোখ রাঙাচ্ছে মূল্যস্ফীতি। সর্বশেষ অক্টোবরে শুধু খাদ্য মূল্যস্ফীতিই ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। চলতি মাসে বাজার ব্যবস্থাপনা আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। সবজির বাজার হতে শুরু করে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত সব পণ্যই এখন লাগামছাড়া।