ডলার ঘাটতি এবং ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্সের ডলারের দামের ক্রমবর্ধমান প্রবণতার কারণে খোলা ও খুচরা উভয় বাজারেই ডলারের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ১২৮ টাকায় পৌঁছেছে। রাজধানীর মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকার একাধিক মানি চেঞ্জারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, ব্যাংকগুলো এখন সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা হারে বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান থেকে রেমিট্যান্স ডলার কিনছে। এটি খোলা বাজারে নগদ ডলারের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৭ থেকে ৮ টাকা। গত সপ্তাহে মানি চেঞ্জারগুলো ১২০ থেকে ১২১ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছিল। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত হার অনুযায়ী খুচরা বাজারে ডলারের দাম ১১৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বিজয় সরণিতে এক মানি চেঞ্জার এক গ্রাহককে বলেন, বিক্রি করার মতো ডলার নেই।’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ডলার বিক্রি করতে চাই। কিন্তু আগে আমাকে ডলার পেতে হবে। ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা প্রস্তাব দিলেও আমরা কোনো ডলার পাচ্ছি না। তাই বিক্রি করার মতো ডলার নেই।’ ডলার কিনতে গিয়ে অনেক গ্রাহক খালি হাতে ফিরেছেন। দিলকুশার দোহার মানি চেঞ্জারের মালিক মুরাদ হাসান বলেন, নগদ ডলারের সংকট চলছে।’ তাই আমাদের নগদ ডলারের চাহিদা অনেক বেড়েছে, কিন্তু আমরা তা পূরণ করতে পারছি না’ তিনি বলেন। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে উত্তাপ বাড়ছেই। টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্যে হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। খোলাবাজারে ডলারের দাম এরই মধ্যে ১২৮ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালেই আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এর বাইরে বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলো বাড়তি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে প্রবাসীদের পাঠানো ডলার কিনতে পারে। বাড়তি এই প্রণোদনা ঘোষণা পর দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে তাতে একটুও কমেনি ডলারের বাজারের উত্তাপ। সরেজমিন দেখা যায়, আজ খোলাবাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১২৮ টাকা। যেখানে গত সপ্তাহ আগে এক ডলার ছিল ১২২ থেকে ১২৬ টাকা। তবে গ্রাহক উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় কম। রাফী আহসান নামের একজন গ্রাহক অর্থসূচককে বলেন, জরুরী কাজে অল্প কিছু ডলারের প্রয়োজন ছিলো। ব্যাংকে গিয়ে ডলারের ব্যবস্থা করতে পারিনি। এজন্য খোলাবাজারে এসেছিলাম। এখানে ডলারের দাম অনেক বেশি। তাই ডলার ক্রয় না করেই চলে যাচ্ছি। এর আগে সর্বপ্রথম ২০২২ সালের আগস্টে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় উঠেছিল। এরপর বেশ কয়েক মাস ডলারের দাম কিছুটা কমতির দিকে ছিল। তবে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২০ টাকায় ওঠে। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতা ১২০ টাকা ৫০ পয়সা ঠেকেছে ডলারের দাম।
এদিকে বাড়তি প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো বাধ্য নয়। ব্যাংক যদি প্রবাসী আয় কিনতে চায় তাহলে এই প্রণোদনা দিতে পারে। নতুন এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। সদ্যসমাপ্ত অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছে। এর আগের মাসে এসেছিল ১৩৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬৩ কোটি ডলার। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাড়তি প্রণোদনা দেওয়ার ফলে স্বল্প সময়ের জন্য প্রবাসী আয় কিছুটা বাড়বে। তবে এটি কোন স্থায়ী সমাধান না। তাই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করতে হলে ডলারের দামের পার্থক্য আরো কমাতে হবে। কারণ এখনো ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা ডলার ও হুন্ডির মাধ্যমে আসা ডলারের দরের মধ্যে এখনো বড় পার্থক্য রয়েছে। ব্যাংক বাড়তি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিলেও প্রতি ডলারের দাম পড়বে প্রায় ১১৬ টাকা। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে বর্তমানে ডলারের দাম ১২০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা উৎসাহীত হবেন না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় পাঠান না সৌদিপ্রবাসী জাহিদ ইসলাম। তিনি গত ৬ বছর ধরে সৌদির বিভিন্ন খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। প্রথম এক বছর তিনি ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশটি থেকে অর্থ পাঠাতেন বলে জানান। তিনি অর্থসূচককে বলেন, বর্তমানে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠালে প্রতি রিয়ালে ২৯ টাকা ২৮ পয়সা পাওয়া যায়। আর হুন্ডির মাধ্যমে ৩০ টাকা ৬০ পয়সা পাওয়া যায়। তাই এখন অধিকাংশ সময়ে হুন্ডিতে দেশে অর্থ পাঠাই। কারণ, যেখানে বেশি দাম পাব, সেখানেই পাঠাব। অনেকে কষ্ট করে আয় করতে হচ্ছে।