ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যয় মাত্র ৮ শতাংশ

বিবিএসের জরিপ
বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যয় মাত্র ৮ শতাংশ

দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলো বিভিন্ন পরিষেবা বাবদ বছরে মাথাপিছু ৭ হাজার ৪৫ টাকা খরচ করে। এর মধ্যে শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মাথাপিছু গড়ে ব্যয় করে ৫৫৮ টাকা। এ ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনগুলো ৬৬১ টাকা ও পৌরসভাগুলো শ্রেণিভেদে ২১৮ থেকে ৫১৫ টাকা পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যয় করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ‘মিউনিসিপ্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমীক্ষা ২০২২’-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব ধরা হয়েছে। এদিকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মাথাপিছু এত টাকা ব্যয় করলেও এর সুফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগর-পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলছেন, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সনাতন পদ্ধতিতে হয়। অর্থাৎ সব ধরনের কঠিন বর্জ্য একত্রে সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিলে, মানে ভাগাড়ে ফেলা হয়। কিন্তু জমাকৃত ওই বর্জ্যরে পুনর্ব্যবহার ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা হয় না। অন্যদিকে বর্জ্য সংগ্রহে এলাকাভেদে বাসাপ্রতি মাসে ১০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মাথাপিছু এত টাকা ব্যয় হলেও তার সুফল মিলছে না। বিবিএসের জরিপে পরিবেশদূষণ প্রতিরোধে স্থানীয় সরকারগুলো কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটিসহ এ খাতের সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে স্থানীয় সরকারগুলো যে পরিমাণে খরচ করছে, তার সুফল আমরা পাচ্ছি না। বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহণ ও ভাগাড়ে জমা করা, কোনোটাই ঠিকভাবে হচ্ছে না।

বিবিএস ১২টি সিটি কর্পোরেশন ও ৩২৮টি পৌর এলাকার জরিপটি করেছে। তাতে দেখা গেছে, দেশের সব নগর এলাকায় দৈনিক মোট ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। মাথাপিছু দৈনিক উৎপাদিত কঠিন বর্জ্যরে পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০০ গ্রাম। উৎপাদিত বর্জ্যরে মধ্যে ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য। আবার নগর এলাকাগুলোর প্রতি বর্গকিলোমিটারে দৈনিক প্রায় ৩ টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রতিদিন উৎপাদিত হয় প্রায় পৌনে সাত টন কঠিন বর্জ্য। কঠিন বর্জ্যরে প্রায় ৭০ শতাংশই আসে বাসাবাড়ি থেকে। এছাড়া বাণিজ্যিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১২ শতাংশ ও শিল্পকারখানা থেকে ১১ শতাংশ বর্জ্য আসে। বর্জ্যরে ধরন বিবেচনায় শীর্ষে রয়েছে খাদ্যবর্জ্য, ১৯ শতাংশ। অন্যান্য বর্জ্যরে মধ্যে কাগজ, কাঠ বা বোর্ড ১৮ শতাংশ ও প্লাস্টিক সাড়ে ১৭ শতাংশ। এ ছাড়া কাপড়, ধাতব, রাবার, গ্লাস ও কৃষিবর্জ্য রয়েছে। কঠিন বর্জ্যরে ৮০ শতাংশের বেশি সংগ্রহ করা হয়। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এই হার ৯৭ শতাংশ। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে নগর-পরিকল্পনাবিদদের। তারা মনে করেন, সংগৃহীত বর্জ্যরে হার ৬০ শতাংশের আশপাশে হবে। সংগৃহীত বর্জ্যরে ৬৮ শতাংশের বেশি চলে যায় ল্যান্ডফিল বা ভাগাড়ে। বাকি বর্জ্যরে মধ্যে ৪ শতাংশ রিসাইক্লিং পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়ায় চলে যায়। কিছু বর্জ্য নদী বা খালের ধারে, কিংবা অনির্দিষ্ট স্থানে ফেলা হয়। আর কিছু বর্জ্য পোড়ানো বা পুঁতে ফেলা হয়। বিবিএসের জরিপমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সব সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা মিলিয়ে ২৮ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ স্থানীয় সরকারগুলো মোট ব্যয়ের প্রায় ৮ শতাংশ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় খরচ করে। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বছরে মাথাপিছু গড় ব্যয় হয় ৫৫৮ টাকা। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনগুলোয় মাথাপিছু ৬৬১ টাকা ও পৌরসভাগুলোয় শ্রেণিভেদে ২১৮ থেকে ৫১৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। এই খরচের বাইরে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে পরিচ্ছন্নতা কাজের নিবন্ধন পাওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বাসাবাড়ি বা বাণিজ্যিক ভবনের বর্জ্য সংগ্রহের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে টাকা নেয়। বিবিএসের জরিপ বলছে, সিটি কর্পোরেশনগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নিয়মিত তদারকি করা হলেও পৌর এলাকাগুলোতে তা করা হয় না। পৌর এলাকাগুলোতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তদারকির হার ৬০ শতাংশের কম। অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভাগাড়ের অভাব, নতুন ভাগাড় স্থাপনে জায়গার সংকট, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমন্বয়হীনতা, জনসচেতনতার অভাব, বাজেটস্বল্পতা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও দক্ষ কর্মীর স্বল্পতা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত