ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ১৩ লাখ টন

নজিরবিহীন রেকর্ড কৃষি উৎপাদনে

নজিরবিহীন রেকর্ড কৃষি উৎপাদনে

বাংলাদেশে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ধানসহ দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তবে দাম বেশি থাকায় মানুষের কেনার সামর্থ্য কমে যাচ্ছে। গ্লোবাল ইনফরমেশন অ্যান্ড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম অন ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি ১০ নভেম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে দেশে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) ৪ কোটি ৭৮ লাখ টন খাদ্যশস্যের (দানাদার খাদ্যশস্য) উৎপাদন হয়েছে। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ১৩ লাখ টন বেশি। ওই বছর দেশে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৮২ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এ তথ্য জানা গেছে। অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট দানাদার শস্যের উৎপাদন হয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৩ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ৪ কোটি ১ লাখ টন, গম ১২ লাখ ৫ হাজার টন এবং ভুট্টা ৬৪ লাখ ২২ হাজার টন। এদিকে গত বছর ডাল জাতীয় ফসলের উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৭৮ হাজার টন। তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৪ হাজার টন। মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার টন, আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টন। অধিদপ্তর বলছে, উন্নতমানের ধান, গম, পাট এবং ডাল, তেল ও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন ও ব্যবহারের লক্ষ্যে কৃষক পর্যায়ে বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন ও মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনের কলাকৌশল বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মানসম্পন্ন ভালো বীজ ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিতকরণের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল ও মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ২৩ জুলাই সরকারি গুদামে চাল ও গমের মজুত ছিল ১৯ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। এটি ২০২২ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। বেশি পরিমাণে শস্য সংগ্রহের পাশাপাশি আমদানি ও বিতরণ কমে যাওয়ায় চলতি জুলাইয়ে দেশের সরকারি খাদ্য মজুত গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। বিশ্লেষকরা এই মজুতকে ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। কারণ, এটি যেকোনো আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়ক হবে। পর্যাপ্ত মজুতের কারণে মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে সরকার বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে বলেও মনে করছেন তারা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ২৩ জুলাই সরকারি গুদামে চাল ও গমের মজুত ছিল ১৯ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। এটি ২০২২ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। গত বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সরকারি খাদ্য মজুত ছিল ১৯ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন, যা সর্বোচ্চ রেকর্ড। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমন ও বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। খাদ্যশস্য সংগ্রহও এখন পর্যন্ত ভালো হয়েছে।’ গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২.৪ শতাংশ বেড়েছে, যা ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে মানুষের খাবার কেনার সামর্থ্য কমেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এফএও মনে করছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর ৭ লাখ ৯৩ হাজার টন বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে পারে। এর মধ্যে বোরো ধান উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হতে পারে, ৩ কোটি ১০ লাখ টন। ফলে এবার সামগ্রিকভাবে খাদ্যশস্য কম আমদানি করতে হবে। তবে খাদ্যপণ্যের দাম বেশি থাকায় দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্যপণ্য কেনার সক্ষমতা কমছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে এফএও প্রতি দুই– এক বছরে প্রতিটি দেশের খাদ্যশস্যের উৎপাদন নিয়ে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এফএওর প্রতিবেদনে সর্বশেষ সমন্বিত খাদ্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত গবেষণার (ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি) তথ্য উল্লেখ করে বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তাহীন মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া নিয়েও তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম বেশি থাকায় বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের খাদ্যপণ্য কেনার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে করা জরিপে দেখা গেছে, দেশের ১ কোটি ১৯ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে। এর আগের ৩ মাস মার্চ থেকে এপ্রিলে এমন মানুষের সংখ্যা ছিল ৮৯ লাখ। অর্থাৎ এ দুই জরিপের মধ্যবর্তী সময়ে খাদ্যসংকটে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৩০ লাখ। খাদ্য উৎপাদন বাড়ার পরও কেন খাদ্যনিরাপত্তাহীন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তার কিছু কারণ এফওএর প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত