শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বন্ধ থাকা গাজীপুর সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের প্রায় সব পোশাক কারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালেই কাজে যোগ দিয়েছেন শ্রমিকরা। স্থিতিশীল পরিবেশে চলছে উৎপাদন কার্যক্রম। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, নতুন নির্ধারিত ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতন মেনে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। যদিও আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি তাদের। অবশ্য গাজীপুর অঞ্চলের ২৩টি কারখানা এখনো উৎপাদনে যায়নি। নিরাপত্তা নিশ্চিতে কারখানা এলাকাগুলোতে বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত বেশ কিছু দিন ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ করে যাচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা। তাদের দাবি, ন্যূনতম বেতন বাড়ানোর যে ঘোষণা এসেছে প্রথমত তাতে তারা সন্তুষ্ট নন। সরকার ৫৬ শতাংশ বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিলেও, শ্রমিকদের মধ্যে সামান্য একটি অংশের এই হারে বেতন বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে যারা অভিজ্ঞ শ্রমিক তাদের বেতন বেড়েছে ২০-৩০ শতাংশ। এর আগে গত ৭ নভেম্বর শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পোশাক শ্রমিকদের এ নতুন মজুরি ঘোষণা করেন। তার আগে শ্রম ভবনে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে গঠিত বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় এই মজুরি চূড়ান্ত করা হয়। এ সময় গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বর্তমান ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ করার ঘোষণা দেন মন্ত্রী। মজুরি বৃদ্ধির এ হার আগের তুলনায় ৫৬.২৫ শতাংশ বেশি। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা সব পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। সব এলাকায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। কোথাও শ্রম অসন্তোষ নেই।
বুধবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প অধ্যুষিত সব এলাকায় বর্তমানে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। কারখানাগুলোতে পুরোদমে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। আজ কোনো কারখানায় শ্রম অসন্তোষের সংবাদ আমরা এখনো শুনতে পাইনি। শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্যে শিল্প এলাকাগুলো ভরপুর। ফারুক হাসান উল্লেখ করেন, আশুলিয়া এলাকার বন্ধ পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিক ভাইবোনরা কাজে ফিরতে আগ্রহ প্রকাশ করায় এবং শ্রমিক ভাইবোনদের সুষ্ঠুভাবে কাজ করার বিষয়ে মালিকদের আশ্বস্ত করার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার আশুলিয়ার সব বন্ধ পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। কারখানাগুলোতে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। মিরপুরের বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো খুলে দেয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার ও বুধবার আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) মিরপুরসহ অন্যান্য সব স্থানের বন্ধ হওয়া পোশাক কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হবে। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে তুসুকা গ্রুপসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। এসব কারখানায় পুরোদমে চলছে উৎপাদন। তবে, কারখানা কর্তৃপক্ষ বলছে, যেসব কারখানায় হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে সেসব কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের থেকে কিছুটা কম। এদিকে, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে গাজীপুর মহানগরীর ভোগাড়া, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, জরুনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা গ্রুপের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনার পর তুসুকাসহ ১৩টি পোষাক তৈরি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গত সোমবার থেকে কিছু কিছু করে চালু হতে থাকে কারখানা। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে সবগুলো কারখানা খুলেছে। এসব কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক। আবার অনেক শ্রমিক গ্রামের বাড়িতেও চলে গেছেন। আন্দোলন ও বিক্ষোভের পর গত ৭ নভেম্বর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখে শ্রমিকরা। সর্বশেষ ৯ নভেম্বর দুপুরের পর থেকে তুসুকা গ্রুপের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে র্যাব, বিজিবি এবং পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়।
শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। পরে তুসুকা কারখানার শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়াও, তারা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এর পরেই কোনাবাড়ী এবং কাশিমপুর এলাকার অনেক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সরকারের মজুরি বোর্ড থেকে বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা ঘোষিত সেই বেতন প্রত্যাখ্যান করে আবার বিক্ষোভ, কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটনায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত শ্রমিক ও পুলিশ সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।