চলছে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দফায় দফায় অবরোধ। এর কারণে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহণে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। শিল্পের জন্য আমদানিকৃত কাঁচামাল সময়মতো কারখানায় পৌঁছাতে না পারায় তৈরি পোশাকসহ সামগ্রিকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশের শিল্পখাত। এতে ক্রেতার বেধে দেওয়া সময়ে পণ্য রপ্তানি নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। সৃষ্টি হয়েছে শিপমেন্ট বিলম্বসহ নানান জটিলতা। শুধু তাই নয়, অবরোধের প্রভাবে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের সব রুটে পণ্য পরিবহণ ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। এতে চরম বেকায়দায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কমে যাচ্ছে তৈরি পোশাকের অর্ডার। হরতাল অবরোধসহ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায় কমতে শুরু করেছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের অর্ডার। নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনের তুলনায় তৈরি পোশাক শিল্পের অর্ডার কমে গেছে ২০ শতাংশের বেশি। নভেম্বরের শেষ নাগাদ অর্ডার কমার হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গার্মেন্টস মালিকরা। চট্টগ্রামে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত ৩৫০টি কারখানাসহ বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত এবং ইপিজেডকেন্দ্রিক প্রায় ৪৫০টি পোশাক কারখানা তৈরি পোশাক রপ্তানির সাথে যুক্ত। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিমাসে গড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার পায় এসব প্রতিষ্ঠান। তবে এখন এই পরিমাণ অর্ডার পাচ্ছেন না গার্মেন্ট মালিকরা। অক্টোবরে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস মালিকরা অর্ডার পেয়েছিলেন ১১৩ মিলিয়ন ডলার। গার্মেন্ট মালিকরা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অর্ডার কমে গেছে। এর মধ্যে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্রেতারা অর্ডার আরো কমিয়ে দিচ্ছেন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সাধারণত প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ কনটেইনার সরবরাহ করা হয়। প্রায় ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং প্রাইম মুভার কন্টেইনারগুলো পরিবহণ করে। কিন্তু দফায় দফায় অবরোধ কর্মসূচির প্রভাবে বর্তমানে কন্টেইনার ডেলিভারি নেমে এসেছে ২ হাজারে। একইসাথে বন্দরে পণ্যবাহী গাড়ি আসার সংখ্যাও কমে গেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আমদানিকারক এবং সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলমান অবরোধের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন তারা। বিএনপির অবরোধকালীন সময়ে বন্দরের কনটেইনার ডেলিভারির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ ডেলিভারি কমে গেছে। গত ২৭ অক্টোবর কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছিল ৪১৩২ টিইইউ। এর পর ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত গত ১৯ দিনের মধ্যে ১০ দিন কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টিইইউসের মধ্যে। ৯ দিন কন্টেইনার ডেলিভারি হয় ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টিইউএসম পর্যন্ত।
অবরোধের কারণে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারির শিডিউলও বদলে যাচ্ছে। শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও অবরোধের সময় ডেলিভারি না নিয়ে অবরোধ নেই এমন দিনে কনটেইনার ডেলিভারির দিকে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি কন্টেইনার ডেলিভারি দিতে গিয়ে বাড়তি চাপে পড়ছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মীরাও। এমন পরিস্থিতিতে আমদানিকারকরা পণ্য ডেলিভারিতে সরকারি ছুটি কিংবা অবরোধ নেই এমন দিনকেই বেছে নিচ্ছেন। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, কোনো বাড়তি চার্জ ছাড়াই বন্দর থেকে কন্টেইনার নেওয়ার জন্য চার দিনের গ্রেস পিরিয়ড পান আমদানিকারকরা। এই প্রাথমিক গ্রেস পিরিয়ডের পরে, আমদানিকারকদের প্রথম সপ্তাহে ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য প্রতিদিন ৬ ডলার করে জরিমানা দিতে হয়। দৈনিক এই জরিমানা দ্বিতীয় সপ্তাহে দ্বিগুণ হয়ে ১২ ডলার এবং ২১তম দিন থেকে বেড়ে ২৪ ডলার হয়। ৪০ ফুট কনটেইনারের জন্যও একই প্যাটার্নে চার্জের পরিমাণ হয় দ্বিগুণ। চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার ধারণ সক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউ। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার রয়েছে ২৭ হাজার ৬৬৫ টিইইউ।