পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমলেও ইউরোপে এখনও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তবে এককভাবে বাংলাদেশের পোশাকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাজার জার্মানিতে রপ্তানি কমছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশই এখন অর্থনৈতিক সংকটে আছে। সেসব দেশের মানুষ ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। খুব প্রয়োজন না হলে পোশাক কিনছে না। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতে। গত অক্টোবরে দেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ১৪ শতাংশ কমে যায়। আগামী কয়েক মাস তৈরি পোশাক খাত নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি এখন জটিলতার মধ্যে যাচ্ছে। বিশ্বে মূল্যস্ফীতি ও সুদহারসহ সবকিছুই অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। একেক দেশে একেকভাবে মুদ্রানীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। অনেক দেশের মানুষ তাদের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব পোশাক খাতের ওপরই পড়ছে। প্রয়োজন না থাকলে তারা পোশাক কিনছে না। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তৈরি পোশাক রপ্তানি ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। ইইউর দেশগুলোর মধ্যে স্পেনে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। এ দেশে ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে। এছাড়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ইতালিতে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে ইউরোপে পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানিতে রপ্তানি ক্রমেই কমছে। জার্মানিতে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশটিতে রপ্তানি কমেছে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
তবে রপ্তানি আশানুরূপ না হওয়ার কারণ হিসেবে আলোচিত এ চার মাসে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কমেনি।
একই সময়ে কানাডায় রপ্তানি ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে ৪৬৩ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। তবে এ সময়ে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে। বিজিএমইএ জানিয়েছে, প্রধান প্রধান বাজারগুলোতে রপ্তানি আয় কমলেও অপ্রচলিত বাজারগুলোতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের চার মাসে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এসব অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশের বেশি।