ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চার মাসে মাত্র সাড়ে ১১ শতাংশ

ঢিমেতালে এডিপি বাস্তবায়ন

এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন
ঢিমেতালে এডিপি বাস্তবায়ন

সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন গতি বাড়াতে নানারকম উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হলেও কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। এডিপি বাস্তবায়নের দৈনদশা যেন কাটছেই না। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢিমেতালে। এমনকি করোনার সময়ে কাজে স্থবিরতা থাকলেও বাস্তবায়ন অগ্রগতি তুলনামূলক বেশি ছিল। বিশেষ করে কয়েকটি মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন কাজে ধীরগতির প্রভাব পড়ছে গড় এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতিতে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দিকে বাস্তবায়ন কম হলেও আগের অর্থবছরগুলোর সঙ্গে তালমিলিয়েই চলছিল। তবে প্রথম চার মাসের হিসেবে বড় ধাক্কা খেল এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি। এমনকি চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে গত আট অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর গত ১০ অর্থবছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন মাসের হিসেবেও গত অর্থবছরের তুলনায় কম। গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন চিত্র প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অর্থবছরের চার মাস শেষ হয়ে গেলেও কোনো কাজ শুরু করেনি সরকারের দুই সংস্থা ও বিভাগ। অর্থাৎ তিন মাসে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি তারা। এছাড়া চার মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের মোট বরাদ্দের যৎসামান্য অর্থ খরচ করতে পেরেছে। আর বরাদ্দের ৫ শতাংশের নিচে বাস্তবায়ন করেছে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই- অক্টোবর) মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এর আগে, শুধুমাত্র ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ সময় পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। এছাড়া বাকি বছরগুলোতে গড়ে ১২ শতাংশের ওপরই ছিল। এমনকি করোনার সময়ও এ হার ছিল ১২ এবং ১৪ শতাংশেরও বেশি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের ছিল ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। মাসের হিসেবে চলতি অর্থবছরের অক্টোবরে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪ দশমকি শূন্য ৪ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরে ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থাৎ, মাসের হিসেবেও কম বাস্তবায়ন হয়েছে। আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১ হাজার ৩৯২টি প্রকল্পের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) বরাদ্দ ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। প্রথম তিন মাসে সবগুলো মন্ত্রণালয় এবং বিভাগ মিলে খরচ করছে ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এ সময়ে বৈদেশিক ঋণ এবং সহায়তার ১১ হাজার ৮৬৪ কোটি, সরকারি ১৮ হাজার ৮১৩ কোটি এবং সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়নের ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন চার মাসেও খরচের খাতাই খুলতে পারেনি। অর্থাৎ, বরাদ্দের এক টাকাও খরচ করতে সংস্থা দুটি। এই দুই বিভাগের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩৪৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এছাড়া খরচের খাতা খুলতে পারলেও যৎসামান্য অর্থ খরচ করেছে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এদের মধ্যে অন্যতম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৪৩৪ কোটি ৮ লাখ টাকা, তারা খরচ করেছে মাত্র ৪২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। যা এডিপির ২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। একই অবস্থা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের। এই মন্ত্রণালেয় মোট বরাদ্দের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ করেছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ অর্থ, পার্বত্য চট্রগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। গত অর্থবছর এক টাকাও খরচ করতে না পারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের চতুর্থ মাসে এসে অবশেষে খরচের খাতা খুলতে পেরেছে। অক্টোবরে বরাদ্দের ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া চার মাসে বরাদ্দের মাত্র শুন্য দশমিক ১০ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ মন্ত্রণালয়ের ১৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ৯৭২ কোটি টাকা ২৪ লাখ। খরচ করেছে মাত্র ১০১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের চার মাসে বরাবরের মতোই খরচ ও এডিপি বাস্তবায়ন হারে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, সংসদবিষয়ক বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়সহ আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত