প্রযুক্তির উৎকর্ষে পৃথিবীর আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে বিশ্ব। একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রযুক্তিই এক ধরনের শাসন করছে পুরো পৃথিবীকে। আধুনিক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে প্রযুক্তিগত জ্ঞান, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ও যথাযথ প্রযোগ সম্পর্কে আমাদের সবারই অবগত হওয়া সময়ের দাবি। নাগরিকদের ‘স্মার্ট সিটিজেন’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা উদ্যোক্তা সৃষ্টি কার্যক্রম তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। আর স্মার্ট কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে জাতীয় উদ্যোক্তা ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা। তথ্য-প্রযুক্তির নিত্যনতুন উদ্ভাবনের পথ ধরে অপার সম্ভাবনার চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিজয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকার বহুমাত্রিক পরিকল্পনা-কর্মকৌশল গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সরকারের প্রতিশ্রুত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রায় শতভাগ দৃশ্যমান হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট ও উন্নত। স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনায় নাগরিকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক সংগতি বাড়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এজন্য অর্থনীতি, সমাজ ও সরকার ব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’। টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় স্মার্ট বাংলাদেশের প্রধান চার স্তম্ভণ্ড স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট সরকার গঠনের জন্য মোটা দাগে ২১টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাগুলো প্রধানত দক্ষতা উন্নয়ন, ক্যাশলেস ও উদ্যোক্তামুখী অর্থনীতি, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকারব্যবস্থা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই সমাজ গঠনকে কেন্দ্র করে। টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে অ্যাকশন প্লান তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। ১৫ জন মন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৫টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই এসব কমিটির সদস্য সচিব বা ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা করা হবে। যেখানে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সব মন্ত্রণালয়ের কাছে স্মার্ট বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের পকিল্পনা ও চাহিদা জানতে চাওয়া হয়েছে। বেসরকারি খাত থেকেও পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। এসব বিষয় থেকে সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ অ্যাকশন প্লান তৈরি করা হবে। কর্মপরিকল্পনাগুলোর একটি ডকুমেন্ট প্রকাশ করা হবে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বিনিয়োগ পরিকল্পনায় নেওয়া হবে। সরকার যেসব লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তার কিছু স্বল্পমেয়াদে বা ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। কিছু বাস্তবায়ন হবে মধ্যমেয়াদে বা ২০৩১ সালের মধ্যে। আর বাকি লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবায়ন হবে দীর্ঘমেয়াদে বা ২০৪১ সালের মধ্যে। সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়, সেজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১৫ জন মন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে ১৫টি উপকমিটি। এসব কমিটি খাতভিত্তিক সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয় নির্ধারণ করবে। পরবর্তীতে কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন অগ্রগতিও মনিটরিং করবে কমিটিগুলো। তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব সামসুল আরেফিন এ বিষয়ে বলেন, এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার নীতি সহায়তা দেবে। প্লাটফর্ম তৈরি করবে। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার অনেকদিন ধরে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বললেও নতুন এই থিমের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল না। টাস্কফোর্সের নির্ধারণ করা লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মাধ্যমে তা পরিষ্কার হলো। ২০২২ সালের আগস্টে স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এরপর চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়ে ধারণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন অর্জনে স্মার্ট বাংলাদেশ কার্যক্রম কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। স্মার্ট বাংলাদেশে নাগরিকের মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ। চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোটায়। মূল্যস্ফীতি নেমে আসবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে। বাজেট ঘাটতি থাকবে ৫ শতাংশের নিচে। রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে। বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ।