প্রণোদনা দ্বিগুণ হওয়ায় সচল হয়েছে রেমিট্যান্সের চাকা। গত অক্টোবরের পর চলতি মাসেও প্রবাসী আয়ের পালে সুবাতাস লেগেছে। প্রথম ১৭ দিনেই দেশে এসেছে ১১৮ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এই হিসাবে গড়ে দৈনিক পৌঁছেছে ৬ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এতে জানানো হয়, চলতি নভেম্বরে রেমিট্যান্সের গতি বেড়েছে। প্রথম ১৭ দিনে দেশে ১১৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আগের মাস অক্টোবরের প্রথম ২০ দিনে যা ছিল ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। আর গত সেপ্টেম্বরের ২২ দিনে ১০৫ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২২ অক্টোবর থেকে অধিক হারে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এরইমধ্যে প্রতি ডলারে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা কার্যকর করেছে সরকার। ফলে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, প্রণোদনা কার্যকর ছাড়াও বাড়তি আরো আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে তা বাস্তবায়ন করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এতেই মূলত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। দেশের আর্থিক খাতের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি নভেম্বরের প্রথম ১৭ দিনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার ডলার। পাশাপাশি বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে পৌঁছেছে ৩ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। আর বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ১০৭ কোটি ৪ লাখ ১০ হাজার ডলার এসেছে। এছাড়া বিদেশি খাতের ব্যাংকের মাধ্যমে পাওয়া গেছে ৩৬ লাখ ডলার। এর আগে বিদায়ী অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। চলতি মাসে চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে তা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। সেই সঙ্গে আগস্টে পৌঁছেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ডলার। উল্লেখ্য, গত অর্থবছরের জুলাইয়ে ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার, আগস্টে ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার, সেপ্টেম্বরে ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার এবং নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। আগের বছরের নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা প্রতিদিন দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রায় ৫ কোটি ৩২ লাখ ডলার। আর চলতি বছরের অক্টোবরে প্রবাসীরা প্রতিদিন বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রায় ৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসাবে নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। প্রণোদনা বৃদ্ধিসহ নানা রকম উদ্যোগের ফলে বৈধ পথে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাড়ছে। সেপ্টেম্বর মাসে গত ৪৪ মাসের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় দেশে আসে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ঘোষিত ২ টাকা ৫০ পয়সা প্রণোদনার পাশাপাশি প্রবাসী আয় সংগ্রহকারী ব্যাংকগুলো আরো ২ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে - এমন অনুমতি দেয়। এ ছাড়াও প্রবাসী আয়ের ডলার সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে আরো বেশি দামে কেনারও অনুমতি দেয়। এর ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়তে থাকে। সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় আসার পর অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয় বেড়ে যায়। যা নভেম্বর মাসেও অব্যাহত রয়েছে।