কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন
ঋণ আদায়ে বিপাকে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক
শীর্ষ ২০ খেলাপি
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক তাদের শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছ থেকে ১১৯ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে; যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ২, ১৯০ কোটি টাকার তুলনায় মাত্র ৫.৪৩ শতাংশ। চলমান অর্থনৈতিক স্লথগতি ও ঋণ বিতরণকালে নানান অনিয়ম হওয়ায় এমনটি ঘটেছে বলে মনে করছেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক- অগ্রণী, জনতা, সোনালী এবং রূপালীর শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে পাওনা রয়েছে ২৩, ৪২১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে নানান অনিয়ম থাকায় এসব ঋণ কিছুদিন পরই খেলাপি হয়ে যায়। ‘খেলাপি ঋণ আদায়ে যতই পরিকল্পনা নেওয়া হোক, প্রকৃত গ্রাহক না থাকায় ঋণ আদায় অসম্ভব। প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণে আরো সতর্ক হওয়া উচিত এবং একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তদারকি বাড়ানো উচিত, ‘বলেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে পাওনা রয়েছে ৮, ৭৩৯ কোটি টাকা; যা তাদের মোট খেলাপি ঋণের ৫৮ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে খেলাপি ঋণ থেকে আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে ৮৭০ কোটি টাকা; অথচ ব্যাংকটির আদায় হয়েছে মাত্র ১৬ কোটি টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২ শতাংশ। এদিকে, জনতা ব্যাংকের ক্যাশ রিকভারি ফ্রম রাইট-অফ লোনের (অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায়) জানুয়ারি-জুন সময়ে টার্গেট ছিল ৩৩০ কোটি টাকা; কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এইখাত থেকে আদায় করেছে মাত্র ২৮ কোটি টাকা বা ৮ শতাংশ। এছাড়া, গত এক বছরে বৈশ্বিক যুদ্ধ অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা খারাপ হওয়ায়ও খেলাপি ঋণ পরিশোধ কমেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাইট-অফ বা অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের হার খুবই কম- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঋণ রাইট-অফ করা হয় এমন পর্যায়ে যখন সেই ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থাকে। এর জন্য আইনিভাবে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে; একই সঙ্গে গ্রাহকের জামানত হিসেবে রাখা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, কিংবা বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে। পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হলে খেলাপি গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে আরো সতর্ক হবেন।’ প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে পাওনা রয়েছে ৬, ৮৫৪ কোটি টাকা; যা তাদের মোট খেলাপি ঋণের ৪৫ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এমওইউ অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে খেলাপি ঋণ থেকে আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে ৬৮৫ কোটি টাকা; অথচ ব্যাংকটি আদায় করেছে মাত্র ১২ কোটি টাকা বা ২ শতাংশ। একই সঙ্গে, অগ্রণী ব্যাংকের ক্যাশ রিকভারি ফ্রম রাইট-অফ লোন থেকে জানুয়ারি-জুন সময়ে টার্গেট ছিল ৪০০ কোটি টাকা। অথচ প্রতিষ্ঠানটি এইখাত থেকে আদায় করেছে মাত্র ১৯ কোটি টাকা বা ৫ শতাংশ। এদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে ঋণ আটকে আছে ৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। এই খেলাপি গ্রাহকদের কাছ থেকে চলতি ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০০ কোটি টাকা। তবে প্রতিষ্ঠানটি আদায় করেছে মাত্র ২৬ কোটি টাকা।