ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন একজন কৃষক

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন

এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন কৃষক
খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য। দেহের বৃদ্ধি গঠন ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে খাদ্য অপরিহার্য। তবে একবিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও দেহকে কর্মক্ষম রাখার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই।

তাই সবার উচিত খাদ্যতালিকায় আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি এই সবগুলো উপাদান নিশ্চিত করা। সুষম খাবার, নিরাপদ ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হয় সবাইকে। তাই সবার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন কৃষক। তবে সহজ শর্তে স্বল্প সুদের এ ঋণের ওপর নজর পড়েছে বড় গ্রাহকদের। তাই গবাদি পশু খামারের নামে তারা নিয়ে যাচ্ছেন বড় অঙ্কের ঋণ। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণিসম্পদ খাতে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ ঋণসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে খামারিদের ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ দিতে পারবে না ব্যাংক। প্রকৃত ও প্রান্তিক কৃষিকের ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে এ সীমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষিঋণ বিভাগ এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করেছে। দেশের ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এ সার্কুলারে বলা হয়, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতে স্বল্প সুদে ঋণপ্রবাহ বজায় রাখার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি স্কিম গঠন করা হয়েছে। পুনঃঅর্থায়ন স্কিম থেকে এরই মধ্যে প্রাণিসম্পদ খাতে কিছু কিছু ব্যাংক বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে। এতে প্রকৃত ও প্রান্তিক কৃষক ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এমন অবস্থায় প্রাণিসম্পদ খাতে একজন খামারিকে সর্বোচ্চ ঋণসীমা ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তাই এই সার্কুলারে আগের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতের জন্য ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করা হয়। যার আকার ৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত এ স্কিমটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালার আওতাভুক্ত ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের সঙ্গে একটি অংশগ্রহণ চুক্তির মাধ্যমে এই সুবিধা নিতে পারবে।

এসব ব্যাংকের চাহিদা, কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা, ঋণ বিতরণের সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে কৃষিঋণ বিভাগ তহবিল বরাদ্দ করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে অর্থ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করবে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনবোধে বরাদ্দকৃত তহবিলের পরিমাণ পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে। সেখানে আরো বলা হয়, এই তহবিলের অধীনে ব্যাংকগুলো নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করবে। ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, বর্গাচাষি ও ফসল (ধান, শাকসবজি, ফুল ও ফল) চাষের জন্য সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। ঋণ পরিশোধে কৃষক বা গ্রাহক ৩ মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস সময় পাবেন।

এই তহবিলের ঋণ কোনোভাবেই গ্রাহক পুরোনো ঋণের সমন্বয় করতে পারবেন না। ক্রমবর্ধমান এই জনসংখ্যার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, যেখানে সারা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে নিরাপদ খাদ্য অনেকটা অমাবস্যার চাঁদের মতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৯ বিলিয়ন হবে এবং খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাবে ৮৫ শতাংশ। এর মধ্যেই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির প্রভাব তার সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যাপক খাদ্য সংকটের ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ এখনও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম বলা যেতে পারে আকাশচুম্বী যা সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্বল্প আয়ের মানুষ তিন বেলার খাবার জোগাড় করতে পারছে না।

কিছু উন্নত দেশ খাদ্যনিরাপত্তা অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে পারলে ও খাদ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনিরাপদ থেকে যাচ্ছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে, বিশ্বে এখনও প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ খাদ্যের অভাবে ভুগছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত