বছরে উৎপাদন সাড়ে ৬ কোটির বেশি

হাঁসের বাজার দ্রুত বাড়ছে

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

একসময় শহরে তেমন চোখে পড়ত না হাঁসের মাংসের বেচাকেনা। হাঁসের মাংস ও ডিম দুটোরই দেখা মিলত শুধু গ্রামে। কিন্তু গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গেছে। শীতের মৌসুম আসতেই শহরের বাসাবাড়ি তো বটেই, ভাতের ছোট হোটেল থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্তোরাঁয় হাঁসের মাংসের চাহিদা বেড়ে যায়। কখনো কখনো শীত উদযাপনে পিঠাপুলি আয়োজনেও অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে ‘হাঁস পার্টি’।

সব মিলিয়ে দেশে দিন দিন হাঁসের মাংসের বাজার দ্রুত বাড়ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত ১০ অর্থবছরে হাঁসের সংখ্যা প্রতি বছরই বেড়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে হাঁস উৎপাদন হয়েছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ, যা সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৬ কোটি ৬০ লাখে। সেই হিসাবে ১০ বছরে হাঁস উৎপাদন ১ কোটি ৭১ লাখ বা ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। বাণিজ্যিকভাবে হাঁস উৎপাদন বেশি হয় দেশের হাওরাঞ্চলে। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরাঞ্চলেও চাষ বাড়ছে। শীত মৌসুমে হাঁস বেচাকেনা অন্তত পাঁচ গুণ বাড়ে। ঢাকায় এখন প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ ট্রাক করে হাঁস আসছে। শীত বাড়লে সংখ্যাটা আরো বাড়বে। ব্যবসাটা মৌসুমি হলেও বছরের অন্য সময়েও হাঁস মোটামুটি বিক্রি হয়। ২ বছরে কিশোরগঞ্জ জেলায় উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ। সরকারি হিসাবে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যত হাঁস উৎপাদিত হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির দাম ন্যূনতম ৫০০ টাকা ধরে হিসাব করলে বছরে হাঁসের বাজার দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হাঁসের মাংস ও ডিমের বাজারে দৃশ্যত বেশ বড় একটা পরিবর্তন এসেছে। তাতে সরকারি হিসাবের চেয়েও হাঁসের বাজার আরো বড় বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে হাঁসের বাণিজ্যিক খামার আছে ১০ হাজারের বেশি। হাঁসের ব্যবসা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর ডিমের বাজারও বড় হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, শহরে হাঁসের মাংস বিক্রির প্রবণতা শুরু হয়েছে মূলত ২০১৫ সালের দিকে। সারা বছর কম-বেশি বিক্রি হলেও বেশি চাহিদা থাকে শীত মৌসুমে। এ সময় বেচাকেনা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। ঘরোয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শীতের পিঠার সঙ্গে খেতেও হাঁসের মাংসের চাহিদা আছে। চুইঝাল দিয়ে রান্না করা হাঁসের মাংসও খেতে পছন্দ করেন অনেকে। বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হাঁসের বড় অংশ ‘পাতিহাঁস’। এই হাঁসের আবার নানা ধরন আছে। তবে বাজারে পাতিহাঁসের পাশাপাশি রাজহাঁস ও চিনাহাঁসের চাহিদাও বেশ ভালো। সব মিলিয়ে শীতকাল এলে সব জাতের হাঁসই বিক্রি হয়। হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাঁসের মাংসের বাজারটা চাঙা থাকে আড়াই থেকে তিন মাস। বড় বেচাকেনা শুরু হয় নভেম্বরের মাঝামাঝি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মৌসুম শেষ হয়ে আসে। রাজধানীতে মোটাদাগে তিনটি স্থানে হাঁসের পাইকারি বেচাকেনা হয়- মোহাম্মদপুর-বছিলা বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন সাদেক খান মুরগির বাজার, কাপ্তানবাজার আড়ত ও এফডিসি-সংলগ্ন ঢাকা মহানগর হাঁস-মুরগির আড়ত। এর মধ্যে শীত মৌসুমে প্রতিদিন সাদেক খান মুরগির বাজারে বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার, কাপ্তানবাজারে আড়াই থেকে ৩ হাজার এবং এফডিসি-সংলগ্ন ঢাকা মহানগর হাঁস-মুরগির আড়তে ৪ থেকে ৫ হাজার হাঁস বিক্রি হয় বলে ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে। ঢাকার বাজারে এখন দেড় কেজি ওজনের প্রতিটি জীবন্ত পাতিহাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এক কেজির বেশি ওজনের পাতিহাঁসের দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। সুপারশপগুলো ড্রেসিং করা প্রতি কেজি পাতিহাঁসের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেয়। আর জীবন্ত রাজহাঁস ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা ও চিনাহাঁস ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে দাম কিছু কমবেশিও হতে পারে। বিক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার হাঁসের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। সুপারশপ ও অনলাইনভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ড্রেসিং করা ও রান্নার উপযোগী করে রাখা হাঁস পাওয়া যায়। বাজার থেকেও হাঁসের পালক ছাড়ানোর সুযোগ থাকে। তাতে আকারভেদে খরচ পড়ে ৩০ থেকে ১০০ টাকার মতো।