পাঁচ বছরে ১৬১২ প্রকল্প

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে গত ৫ বছরে ১ হাজার ৬১২টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ সময় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় লাখ কোটি টাকা। সরকার গত ৫ বছরে আটটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া বাকি সব মেগা প্রকল্পই উদ্বোধন করা হয়েছে।

এরই মধ্যে এসব প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে সাধারণ জনগণ। রাজধানীবাসীর যানজটের দুর্ভোগ লাঘব করেছে মেট্রোরেল। দক্ষিণ বঙ্গে পদ্মা সেতু সম্পন্ন হওয়ায় ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার যাত্রা এখন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায় নেমে এসেছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ হওয়ায় এখন স্বল্প সময়ে ঢাকা থেকে যাওয়া যাচ্ছে যশোর-খুলনায়। ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেনেই যাওয়া যাচ্ছে দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে। চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করেছে কর্ণফুলী টানেল। এছাড়া বেশকিছু উড়ালসহ বড় বড় সেতু এবং অবকাঠামো দেশের জনগণের জীবনযাত্রা করেছে অনেক সহজ। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, উন্নয়ন টেকসই হলে জনগণ এসব প্রকল্প থেকে সুফল পাবে। তবে আরো পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো করা দরকার। ডিসেম্বর পর্যন্ত মেগা প্রকল্পগুলোর গড় অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত গত ৫ বছরে একনেকে অনুমোদন পেয়েছে ৯০০টির বেশি প্রকল্প। আর পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন প্রায় ৭০০ প্রকল্প। যদিও অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে বড় একটি অংশ সংশোধিত প্রকল্প। পরিকল্পনা বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একনেক সভায় ও পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদিত মোট ৪১৪ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুমোদন পেয়েছে ২৪৮ প্রকল্প, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২৩ প্রকল্প, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৫৬ প্রকল্প, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২২৭ প্রকল্প এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সর্বশেষ একনেক পর্যন্ত ২৪৪ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যে প্রকল্পগুলো একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে নতুন ৮২টি, সংশোধিত ৬০টি এবং মেয়াদ বাড়ানো প্রকল্প ১৫টি। এছাড়া পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ৮৫টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এবার চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এডিপির আকার বেড়েছে ৯৮ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। যদিও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়গুলোর যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সে অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে পারছে না সরকার। যার ফলে অনেক প্রকল্পই নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারকে এখন উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া দরকার। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের আরো দক্ষতা উন্নয়ন করা দরকার। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আরো বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রকল্প নেওয়া উচিত- জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘আমরা যাতায়াত ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে চাই। সড়কপথ, রেলপথ, নৌপথ এবং আকাশপথ- সব মাধ্যমে যাতে দেশের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায়, সরকার সেই ব্যবস্থাই করছে। একটি পদ্মা সেতু হয়েছে। এটির মতো আরো কয়েকটি সেতু তৈরিতে সরকার কাজ করছে। যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে সড়ক ফোর লেন করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বেশি বেশি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের আরো উন্নয়নে কাজ করছে। এরই মধ্যে আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা তৈরি হয়েছে। ফলে এখন আমাদের প্রকল্পগুলো আরো দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।’