ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মাংস-ডিমে মধ্যবিত্তের খানিক স্বস্তি

৪০ টাকার কমে মিলছে ডিমের হালি, ৬০০ টাকার নিচে গরুর মাংস
মাংস-ডিমে মধ্যবিত্তের খানিক স্বস্তি

আমদানিকারকরা ডিম দেশে নিয়ে আসতে শুরু করায় স্থানীয় অনেক উৎপাদক দাম দ্রুত কমিয়ে দিয়েছেন। বাজারে ডিমের দাম কমতে থাকলে আমদানিকারকরা লোকসানের ভয়ে ডিম নিয়ে আসতে চাইবেন না। আমদানির ডিম যাতে না আসে, সেই বার্তাই দিতে চাইছেন তারা। কারণ উৎপাদনকারীরা চান না যে ডিম দেশে আমদানির পথ উন্মুক্ত হোক।

সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১২ টাকা করে নির্ধারণ করা হয় সেই সময়, যখন বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম সাড়ে ১৩ টাকা ছিল। এরপর বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার প্রথম ডিম আমদানির অনুমতিও দেয়। এরপর থেকে ক্রমাগত কমে এখন ১০ টাকায় মিলছে প্রতি পিস ডিম। এদিকে গত এক সপ্তাহে কয়েক দফায় দাম কমে এখন বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০০ টাকা করে। খামারি এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬০০ টাকা দামে গরুর মাংস বিক্রি করেও তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে না। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে গরুর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় আরো কম দামে বিক্রি করলেও ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক লাভ থাকবে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রামপুরা, মালিবাগ ও সেগুনবাগিচা বাজার ও এসব এলাকার পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোর ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বড় বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। অর্থাৎ ১০ টাকা পিস। পাইকারিতে দরদাম করে ১১৫ টাকাও কেনা যাচ্ছে। তবে, পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে এখনো ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত একমাসে বাজারে ডিমের দাম সাড়ে ২১ শতাংশ কমেছে। গত মাসে প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, যা এখন ৩৭ থেকে ৪৩ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত তিনমাস আগে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল ডিমের দাম। সেসময় থেকে ডিমের উৎপাদন বাড়াতে শুরু করেন খামারিরা। যে ডিমগুলো এখন বাজারে আসছে। এ কারণে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেড়েছে। প্রতিদিন-ই পাইকারি বাজারে প্রতি ১০০ ডিমের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকা করে কমছে। এদিকে, ফার্মের মুরগির সাদা রঙের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। তেজগাঁও ডিমের আড়তের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলছেন, গতরাতে তারা প্রতি ১০০টি সাদা ডিম ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। আর বাদামি রঙের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮৮০ থেকে ৯২০ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সরকার প্রতিটি ডিমের খুচরা মূল্য ১২ টাকায় বেঁধে দেওয়ার পরও দাম কখনোই এতটা কমেনি। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। বেশ দ্রুতগতিতে ডিমের দাম কমছে বলে জানান তারা। বর্তমান ডিমের দামের দরপতনে খামারিদের লোকসান হচ্ছে বলেও জানান কয়েকজন। বাজারে ডিমের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমেছে উল্লেখ করে তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন, আমদানির কারণে ডিমের দাম কমেনি। এখন খামার থেকে প্রচুর ডিম আসছে, তাতেই দাম নেমে এসেছে।

৬০০ টাকায় গরুর মাংস, লাভ থাকছে আগের মতোই

কয়েকদিন আগেও রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। সে সময় গো-খাদ্যের বেশি দাম, হাট ও পরিবহনে চাঁদাবাজির মতো নানা যুক্তি হাজির করতেন ব্যবসায়ীরা। গত এক সপ্তাহে কয়েক দফায় দাম কমে এখন বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০০ টাকা করে। খামারি এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬০০ টাকা দামে গরুর মাংস বিক্রি করেও তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে না। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে গরুর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় আরো কম দামে বিক্রি করলেও ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক লাভ থাকবে। ঢাকার আশপাশের কয়েকটি খামার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে। খামারিরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে গো-খাদ্যের দাম কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। সে সময় থেকে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তারা হাইব্রিড ঘাস উৎপাদন শুরু করায় এখন গরু লালন-পালনের খরচ অনেকটা কমে এসেছে। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, গরুর মাংসের দোকানে এখন রীতিমতো দাম কমানোর প্রতিযোগিতা চলছে। কোনো দোকানে ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হলে পাশের দোকানে ক্রেতাদের ডেকে এনে ৫৮০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি করছে। কোথাও কোথাও দোকানিরা দাম কমার সাইনবোর্ড লাগাচ্ছেন। এতে দোকানে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বিক্রেতাদের মতে, বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাবে অতিরিক্ত মুনাফা করতে গিয়ে ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর কারণে এখন তারা কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাচ্ছেন না। তাই বাধ্য হয়ে এখন কম দামেই মাংস বিক্রি করছেন। তবে কম দামে বিক্রি করলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাদের কোনো লোকসান হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরুর মাংসের চাহিদা বাংলাদেশে কখনও কম ছিল না। কিন্তু দাম ৭৫০ বা ৮০০ টাকা হয়ে যাওয়ার পর স্বল্প আয়ের মানুষদের পক্ষে তা নিয়মিত কেনা সম্ভব ছিল না। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকায় একটি শক্তিশালী চক্র অতিমুনাফা করতে মাংসের দাম বাড়িয়েছিল। এখন বিক্রি কমায় নিজেরাই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ফলে দাম কমিয়ে বিক্রি করছে। যে দামে বিক্রি হচ্ছে তাতেও তারা বাড়তি মুনাফা করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত