হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে গরুর মাংস, আর সেই মাংস কিনতে দোকানে দোকানে ক্রেতাদের সারি। ক’দিন আগেও যে মাংস কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৫৯৫ টাকায় কিনছেন ক্রেতারা। কোথাও কোথাও ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা। কসাই শব্দটির সঙ্গে কঠোরতা ও নিষ্ঠুরতার সম্পর্ক রয়েছে। তাই একটু কঠিন হৃদয়ের মানুষকে অনেক সময় কসাইয়ের সঙ্গে তুলনা করে ‘বলা হয়, আপনার মনটা কসাইয়ের চেয়েও কঠোর।’ অথচ এই উচ্চ মূল্যের বাজারে কসাইয়ের কঠোর মনও গলে গেল। অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেওয়ায় বেশ কয়েকজন কসাই সিদ্ধান্ত নেন, কম দামে গরুর মাংস বিক্রির; যাতে সাধারণ মানুষ কম টাকায় গরুর মাংস কিনতে পারে। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গরুর মাংসের দাম বাজারভেদে ৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার ও কারওয়ান বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। তবে রাজধানীর শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মুজাহিদনগর, মেরাজনগর, জুরাইন, লালবাগ, হাজারীবাগ ও কাপ্তানবাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম দুই মাসের ব্যবধানে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। তবে কম দামি মাংসে চর্বির পরিমাণ একটু বেশি থাকে। বিক্রেতারা বলছেন, রাজধানীর যেসব এলাকায় সীমিত আয়ের মানুষ বেশি থাকেন, সেসব এলাকায় গরুর মাংসের দাম বেশি কমেছে। এর আগে গত মার্চে গরুর মাংসের দাম বেড়ে প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায় উঠেছিল। তাতে গরুর মাংস সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। বিক্রি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। এখন দাম কমিয়ে দেওয়ায় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর শাহজাহানপুরের একটি দোকানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫৯৫ টাকায়। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় করছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে, এই উদ্যোগের ফলে আগ্রহ বাড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষেরও। বিক্রেতা খলিলের মতে, চাহিদা মেটাতে দিনে অন্তত ৫০টি গরু জবাই হচ্ছে তার দোকানে। যদিও বেশিরভাগ বাজারে এখনো চড়া এই মাংসের দাম। চাহিদা আর আকাঙ্ক্ষা থাকলেও চড়া দামের কারণে গেল ৬ মাস গরুর মাংস কিনতে পারছিলেন না চটপটি বিক্রেতা কামাল। অবশেষে তার এই আক্ষেপ ঘুচিয়েছে শাহজাহানপুরের খলিলের দোকান। সেখান থেকে ৫৯৫ টাকা দরে কিনলেন ৩ কেজি গরুর মাংস। ক্রেতা কামাল বলেন, ৮০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস খাওয়ার সামর্থ্য নেই আমাদের। এখানে দাম কম, তাই এসেছি। ফকিরাপুল থেকে হেঁটে এসে নিলাম। সপ্তাহ খানেক ধরে, বাজারের চেয়ে কেজিতে অন্তত ১৫০ টাকা কমে গরুর মাংস বিক্রি করছেন খলিল। প্রতিদিন যেখানে জবাই হয় অন্তত ৫০টি গরু। তার মতে, পশুর দাম কমেছে কিছুটা। নিজেও ছাড় দিয়েছেন মুনাফায়। ফলে হিসাব-নিকাশের পর খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করতে পারছেন প্রতি কেজি ৬০০ টাকার নিচে। তাই ভিড় উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকেও দোকানে কিনতে আসেন অনেকে। খলিলের এই দামের কারণে ছাড় দিতে বাধ্য হয়েছে আশপাশের দোকানগুলোও।
বিক্রেতা খলিল বলেন, আগে ৮০০ টাকা করেই বিক্রি করতাম। এখন গরুর মূল্য একটু কমেছে। তাই মাংসের দামও কমিয়ে দিয়েছি। আরেক বিক্রেতা বলেন, সেখানে ৫৯৫ টাকায় পাওয়ায় আমাদের দোকানে কেউ কিনতে আসে না। তাই আমরাও দর কমিয়ে দিয়েছি। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমানের মতে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে সবসময়ই চাহিদা ও জোগানের সমন্বয় থাকা জরুরি। তিনি বলেন, একজন যদি দর কমায়, তাহলে অন্যরা কমাতে বাধ্য হয়। আবার সে যদি মূল্য বাড়ায়, তাহলে বাকি বিক্রেতারাও বাড়ায়। উল্লেখ্য, গরুর মাংসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে খাসি ও ব্রয়লার মুরগির দাম। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংসের উৎপাদন ছিল ৮৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাজারে দাম ছিল বেশি। কিন্তু মানুষ মাংস কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে।