দেশে বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনে ‘রেইন্ট্রিগেশন অব রিটার্নিং মাইগ্রেন্টস- রেইজ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটিতে উপকৃত হবেন ২ লাখ প্রবাসী। এর আগে সারাদেশ থেকে সাতটি এনজিও সংস্থার মাধ্যমে এসব প্রবাসীর রেজিস্ট্রেশন করা হবে। এরই মধ্যে ৫৯ হাজার কর্মী রেজিস্ট্রেশন করেছেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রণোদনা বাবদ বিনা শর্তে প্রত্যেককে দেওয়া হবে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা। গত মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের সভাকক্ষে করোনার কারণে বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য প্রকল্পের কার্যক্রম ও সুযোগ-সুবিধা অবহিতকরণ সংক্রান্ত বিষয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্য দেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান। এতে সঞ্চালক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেইজ প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. জাহিদ আনোয়ার। এছাড়া মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর, বাংলাদেশ ওভারসীজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, মো. মাসুদ রানাসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা। মতবিনিময় সভায় বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য নেওয়া এই প্রকল্পের কাযক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন রেইন্ট্রিগেশন অব রিটার্নিং মাইগ্রেন্টস- রেইজ প্রকল্পের পরিচালক সৌরেন্দ্র নাথ সাহা। তিনি বলেন, যেসকল কর্মী বিদেশ যাওয়ার পর দক্ষতা অর্জন করেছেন কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক সনদ নেই, এ সকল কর্মীদের ‘রিকগনিশন অব প্রিয়র লার্নিং- আরপিএল এর আওতায় ২৩ হাজার ৫০০ কর্মীকে দেওয়া হবে কারিগরি সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগসহ দক্ষতা সনদ প্রদান করা হবে। আর এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী কর্মী সংখ্যা ২ লাখ। যাদের প্রত্যেককে এককালীন সাড়ে ১৩ হাজার টাকা করে মোট ২৭০ কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রথম বারের মতো বিদেশ ফেরত কর্মীদের একটি তথ্য সমৃদ্ধ ডাটাবেইজ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে গেল ৪ মাসে ৫৯ হাজার ১০০ কর্মী রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৫৫ হাজার ৪০৫ জন এবং নারী ৩ হাজার ৬৯৫ জন।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৭৩২জনকে রেফারেল করা হয়েছে। এরই মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৬০৬ জন এবং নারী ১২৬ জন। রেইজ প্রকল্পের পরিচালক বলেন, ‘রেইন্ট্রিগেশন অব রিটার্নিং মাইগ্রেন্টস রেইজ’প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে আন্তজার্তিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম বাংলাদেশ। এছাড়া কনসালট্যান্ট হিসেবে আরো সাতটি বেসরকারি সংস্থা (রামরু, ওকাপ, ব্র্যাক, প্রত্যাশী, বিএসএসকে, ওয়্যারবি, কেএনইউএস) সহায়তা করছে। প্রকল্প পরিচালক সৌরেন্দ্র নাথ বলেন, ‘প্রকল্পের রেফারেল কর্যক্রমের আওতায় কর্মীর চাহিদা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় সহযোগিতা করা হবে। যাতে করে বিদেশ ফেরত কর্মীরা সমাজে নিজেকে পুন:প্রতিষ্ঠায় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।’
এ প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণ এবং আত্মকর্মসংস্থানে যেসব সহযোগিতা করা হচ্ছে- নগদ প্রণোদনা, আত্মকর্মসস্থানে সহযোগিতা, ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা, কাউন্সেলিং, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণে সহযোগিতা, কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণে সহযোগিতা, কল্যাণমূলক অন্যান্য সহযোগিতা ও দক্ষতা সনদ প্রদান। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড সূত্র জানায়, রেইজ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের জুলাইতে। ৪ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হতে করোনার কারণে ফেরত অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণের লক্ষ্যে রেইস প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩০টি জেলায় স্থাপিত ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে করোনার কারণে বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীরা ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিনামূল্যে নিবন্ধন করতে পারবেন।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ৪২৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়াধীন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। মতবিনিময় সভায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, করোনা মহামারিতে বিদেশ থেকে কাজ হারিয়ে দেশে ফেরেন প্রায় ৫ লাখ কর্মী। ফেরত আসা এসব কর্মীরা সমাজে নানা ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।
তাই তাদের পুণঃএকত্রীকরণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘রেইজ’ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ঢাকাসহ দেশের ৩০টি স্থানে ফেরত আসা প্রবাসীদের জন্য ওয়েলফেয়ার সেন্টার স্থাপন হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪২৭ কোটি টাকা। যার প্রায় পুরোটাই (৪২৫ কোটি টাকা) দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এছাড়া এই ওয়েলফেয়ার সেন্টারগুলোতে কোভিডকালে ফেরত প্রবাসী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ শেষে যাচাই-বাছাই করে প্রণোদনার টাকা দেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, যেসব কর্মী বৈধভাবে বিদেশ গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত এসেছেন তারাই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। তবে এই প্রণোদনা ফেরত আসা কর্মীদের ক্ষতিপূরণ হিসেব নয় বরং এর মাধ্যমে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সামাজিকভাবে কানেক্টে করা। যাতে করে তারা সমাজে নিজেকে পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নিজেই নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।