ঢাকা ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টাকার মান বাড়ল

টাকার মান বাড়ল

ডলারের তীব্র সংকটের মধ্যেও চলতি অর্থবছর মাত্র সাড়ে চার মাসে রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৫.২৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে জুলাই থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ৪ বিলিয়ন ডলার। এটি ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি ও এক্সচেঞ্জ রেট কমানোর প্রয়োজনীয়তার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে ২৩ নভেম্বর এসে দাঁড়িয়েছে ১৯.৫২ বিলিয়ন ডলারে। এই পরিস্থিতিতে দুটি ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন টাকার মান ৫০ পয়সা বাড়ালেও তার ফল গেছে প্রত্যাশার বিপরীতে। ২২ নভেম্বর অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় দুই ক্ষেত্রেই ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমিয়ে ১১০ টাকা করার ঘোষণা দেয়; টানা এক বছর বাড়ার পর এবারই কমানো হয় ডলারের দাম। আমদানিকারকদের জন্য ডলারের দাম ১১১ টাকা থেকে কমিয়ে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডলারের নতুন দাম ঘোষণার একদিন পর নতুন এক ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুখপাত্র মেজবাউল হকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে, বিদেশি ঋণ ও আমদানি কমার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমে গেছে। এর ফলেই বেড়েছে টাকার মূল্যমান। মেজবাউল হক আরো বলেছিলেন, তার ধারণা, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বোঝা দ্রুত কমছে বিধায় ডলারের দাম আরো কমবে। তবে, কার্ব মার্কেটে নির্ধারিত হারের রেটের চেয়ে প্রায় ২০ টাকা বেশি দরে রেমিট্যান্স ডলার বিক্রি হচ্ছে, অর্থাৎ দাম কমানোর তাৎক্ষণিক বাজার প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ বিপরীত। নতুন রেট ঘোষণার মাত্র একদিন পর রেমিট্যান্স ডলারের দাম ১১৮-১১৯ থেকে বেড়ে ১২১-১২২ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় টাকার মান বাড়ানোর যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সিনিয়র নির্বাহী বলেন, তারা সাধারণ নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সংকেত দিতে চান। এর আগে, ডলারের চাহিদা কীভাবে কমবে তা ব্যাখ্যা করার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বেসরকারি খাতের নেওয়া স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ কমেছে। মেজবাউল হক বলেন, স্বল্পমেয়াদি ঋণের বিপরীতে মাসিক পরিশোধের পরিমাণ পরের বছরের সেপ্টেম্বরে মাত্র ৪৯.৮৭ মিলিয়ন ডলারে। এ বছরের অক্টোবরে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয় বাংলাদেশকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই বছরের প্রথম আট মাসে ধার করা স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার চেয়ে বেশি পরিশোধ করা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ এখন ১২.৪ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার উৎস উল্লেখ না করে শুধুমাত্র ঋণ পরিশোধের সময়সূচি গণনা করেছে। স্বল্পমেয়াদি ঋণের নিট ১২ বিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে সক্ষম হওয়ার জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকের ১৪ থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলারের ফ্লো প্রয়োজন হবে। চাহিদা ও জোগান উভয় দিকেই সমস্যার কারণে স্বল্পমেয়াদি ঋণের প্রবাহ কমছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, স্বল্পমেয়াদি ঋণ কমে যাওয়ায়, ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ হওয়ায় রিজার্ভ থেকে অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর হিসাব পদ্ধতিতে গণনা করা দেশের রিজার্ভের পরিমাণ এখন ১৯.৫২ বিলিয়ন ডলার বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিপিএম৬ হিসাব পদ্ধতিতে রিজার্ভ গণনা করা হয়, যেখানে স্থানীয় বিনিয়োগকে বাদ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে, গ্রস বা মোট রিজার্ভ বর্তমানে ২৫.১৬ বিলিয়ন ডলার বলেও জানিয়েছে। বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাবকৃত সম্পূর্ণ রিজার্ভই ব্যবহারযোগ্য। অন্যদিকে বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায়সাপেক্ষে গ্রস রিজার্ভও ব্যবহারযোগ্য। সে হিসাবে, মোট ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হচ্ছে ১৯.৫২ বিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত