ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিশ্বে ফিডের দাম কমলেও বেড়েছে দেশে

ফিডের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় খামারিরা

ফিডের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তায় খামারিরা

ডিম ও মুরগির বাজারে দূর হয়েছে অস্থিরতা। বাজারে স্বস্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে খামারিদের ওপর। একদিকে বেড়েছে ফিডের দাম, অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে উৎপাদন খরচেরও নিচে। এ অবস্থায় নতুন করে খামারিদের উৎপাদন থেকে সরে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের তথ্য মতে, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে পুঁজি হারিয়ে অনেক খামারিই উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। এর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ফিডের দাম বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এই সংখ্যা প্রতিনিয়তই বেড়েছে।

কোভিডের পর থেকে এ পর্যন্ত খামারিদের ঝরে পড়ার এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজারে। যা দেশে মোট পোলট্রি খামারিদের প্রায় অর্ধেক। এই অবস্থায় আরো একবার নতুন করে ধাক্কা খাচ্ছেন খামারিরা। গত ২৫ নভেম্বর থেকে ব্রয়লার ও লেয়ার ফিডের দাম কোম্পানিভেদে কেজিতে আড়াই থেকে সাড়ে তিন টাকা বাড়ানোর কথা জানায় কোম্পানিগুলো। যেখানে তিন দফায় সাড়ে ৩ টাকা পর্যন্ত দাম কমিয়েছিল ফিড উৎপাদনকারীরা, সেখানে এক লাফেই সাড়ে ৩ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি তারা বিক্রি করছেন ১৩০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচই ১৬০ টাকার বেশি। একইভাবে ব্রয়লার মুরগির প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে খামার পর্যায়ে ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকা, যেখানে উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকার বেশি। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলেছে, এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৬.৬৭ শতাংশ এবং ডিমের দাম ২১.৫৭ শতাংশ কমেছে। খামারিরা বলছেন, সরকার যদি এখন খামার পর্যায়ে ডিম ও মুরগির দাম কত হবে সেটা নির্ধারণ করে না দেয়, তাহলে সংকট আরো বাড়বে। খামারিরা আবার লোকসান করতে থাকলে সেটা দীর্ঘমেয়াদে সরবরাহ চেইনে বড় সংকট তৈরি করবে। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘খামারিদের বাঁচানোর জন্য সরকারকে এখানে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করতে হবে। কারণ, সাপ্লাই চেইনের তিন-চারটি হাতবদলে সবাই লাভবান হলেও বঞ্চিত হচ্ছে উৎপাদনকারীরা।’ তিনি বলেন, ‘সরকার যদি খামারিদের উৎপাদন খরচের মূল্য ঘোষণা করে তা পর্যবেক্ষণ করে, তাহলে এ অবস্থার উন্নতি হতে পারে। তা না হলে খামারিরা উৎপাদন থেকে সরে আসবে এবং দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন ঘাটতি তৈরি হবে। ফলে এটা বাজারে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।’খামারিরা উৎপাদন খরচের নিচে ডিম-মুরগি বিক্রি করলেও নতুন করে ফিডের দামের ঘোষণা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। গত ২৪ নভেম্বর মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (এফআইএবি) ফিডের দাম বাড়ার বিষয়ে একটি চিঠি দেয়।

জানা যায়, এ বছর সরকারের নানা ধরনের চাপের কারণে ব্রয়লার মুরগির ফিডের দাম তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা কমানো হয় তিন দফায়। ফিড উৎপাদনকারীরা বলছেন, চলতি বছরের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ফিডে ব্যবহৃত প্রধান সাতটি কাঁচামালের দামে প্রতি কেজিতে প্রায় সাড়ে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে আগস্টে কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে যেখানে ডলারপ্রতি ১১০ থেকে ১১১ টাকা দিতে হতো, সেটা নভেম্বরে এসে দাঁড়িয়েছে ১২২ টাকায়। ফিড উৎপাদনকারীদের দাবি, শুধু কাঁচামাল ও ডলারের দাম বাড়ার প্রভাবেই প্রতি কেজি ফিডে ব্যয় বেড়েছে গড়ে প্রায় সাড়ে ৫ টাকা থেকে ছয় টাকা। শুধু আমদানি করা কাঁচামালই নয়, স্থানীয়ভাবে ভুট্টার দাম ২৯ টাকা থেকে বেড়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় উঠেছে। সিড ক্র্যাশিং ইন্ডাস্ট্রি কোনো ঘোষণা ছাড়াই সয়াবিন মিলের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়েছে। যে কারণে এই কাঁচামালটি ৬৫-৬৭ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৮২ থেকে ৮৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এফআইএবির সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি কেজি ফিডে যে পরিমাণ ব্যয় বেড়েছে, তা সমন্বয় করা না হলে অনেক ফিড মিল ঋণ খেলাপি হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত