সরকারি জনশক্তি রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের শতভাগ মুনাফা বেড়েছে

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

যথেষ্ট মুনাফা বাড়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি শ্রম রপ্তানি দক্ষতায় বেসরকারি রিক্রুটারদের তুলনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে। ২০২৩ অর্থবছরে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে সব মিলিয়ে ১১ লাখ ৩৭ হাজার কর্মী, এর মধ্যে বিওইএসএল পাঠিয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ২৯৪ জন কর্মী, যা সর্বমোটের ১.৩ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শ্রম রপ্তানিকারক একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বিওইএসএল) মুনাফা অর্জনে বড় সাফল্য দেখিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ৪৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়েও দ্বিগুণের বেশি (১১৪ শতাংশ)। বিওইএসএলের সূত্র মতে, ২০২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব ৬৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেড়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১২৮ শতাংশ। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো দক্ষিণ কোরিয়ায় রেকর্ডসংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ।

বিওইএসএলের এখন বড় বাজার দক্ষিণ কোরিয়া। গত অর্থবছরে প্রায় ৬ হাজার ৭৪৯ জন বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে দেশটি। পরিষেবা ফি হিসেবে প্রত্যেক অভিবাসী কর্মীকে বিওইএসএলকে দিতে হয়েছে ৩৪ হাজার টাকা। তবে যথেষ্ট মুনাফা বাড়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি শ্রম রপ্তানি দক্ষতায় বেসরকারি রিক্রুটারদের তুলনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে। ২০২৩ অর্থবছরে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে সব মিলিয়ে ১১ লাখ ৩৭ হাজার কর্মী, তারমধ্যে বিওইএসএল পাঠিয়েছে মাত্র ১৫ হাজার ২৯৪ জন কর্মী, যা সর্বমোটের ১.৩ শতাংশ। বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য অভিবাসনপ্রত্যাশী কর্মীদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ফি নেওয়ার পরও বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসন খাতে বিওইএসএলের ভূমিকা তুলনামূলক কমই বলা চলে।

১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাষ্ট্রীয় এ প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ১ লাখ ৪৫ হাজার শ্রমিককে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুবিধা দিতে পেরেছে। যেখানে বেসরকারি সংস্থাগুলো একই সময়ে প্রায় দেড় কোটি শ্রমিক বিদেশে পাঠিয়েছে। অভিবাসনের জন্য তুলনামূলক কম খরচ, সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিদেশি নিয়োগদাতাদের কাছে আস্থা হতে পারায় অভিবাসন বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডাররা বিওইএসএলের প্রশংসা করেছেন। তারপরও সীমিত সক্ষমতা, অকার্যকর বিপণন কৌশল, আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতাসহ আরো কিছু কারণে বিওইএসএলের নতুন নতুন চাকরির সুযোগ অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিওইএসএলের তুলনায় বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর এগিয়ে থাকার আরেকটি কারণ হলো ভিসা বাণিজ্য। ভিসা বাণিজ্য হলো মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে বিদেশি নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে ভিসা সংগ্রহ করা এবং বাংলাদেশের মতো উৎস দেশগুলোর রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে সেগুলো বিক্রি করা। এটি আইনত অবৈধ হলেও ব্যাপক পরিসরে, অহরহই হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশী কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থও হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিওইএসএল এ ধরনের অনুশীলন থেকে দূরে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষ শ্রমিকদের অভিবাসনের জন্য তারা নতুন গন্তব্য, নতুন বাজারের সন্ধান করছেন। এ অর্থবছরে বিজনেস প্রমোশন ইনিশিয়েটিভের আওতায় প্রতিষ্ঠানটি ইউরোপীয় বাজারও উন্মুক্ত করেছে এবং কিছু সংখ্যক নির্মাণ শ্রমিককে ক্রোয়েশিয়ায়, আর তৈরি পোশাক খাতের কর্মীকে রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়াতে পাঠিয়েছে। এছাড়া কুয়েতেও ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী ৬৬১ জন নার্স, মালয়েশিয়ায় ম্যানফ্যাকচারিং ও প্ল্যান্টেশনের জন্য ৮৮৫ জনকে, আর ফিজিতে ৭২ জন দক্ষ কর্মী পাঠানো হয়েছে। রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে ৩২ জন জাহাজ নির্মাণ কর্মী। এছাড়া বিওইএসএল অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই দারুসসালাম, লেবানন এবং বিশ্বের অন্যান্য সম্ভাব্য গন্তব্যে নতুন চাকরির সুযোগ চালু করার চেষ্টা করছে। বিওইএলএসকে সহায়তার জন্য দূতাবাস রয়েছে। এদের কাজে লাগিয়ে তারা সামনে এগোতে পারে। বিওইএসএল’র প্রধান শ্রম বাজার দক্ষিণ কোরিয়া ও জর্ডান। ২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি তৈরি পোশাক খাতে জর্ডানে সর্বাধিক সংখ্যক কর্মী পাঠিয়েছে, সরকারি চুক্তির অধীনে। এ সময়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠিয়েছে ২৮ হাজার কর্মী, যাদের বেশিরভাগই ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এক তৈরি পোশাক কারখানায় মেশিন অপারেটর পাঠানোর মাধ্যমে জর্ডানে তাদের কর্মী সরবরাহ শুরু করে। বর্তমানে জর্ডানের ৪২টি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান বিওইএসএলের মাধ্যমে মাসিক ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা বেতনে পোশাক শ্রমিক নিয়োগ দিচ্ছে। বিদেশি নিয়োগদাতারা বিমান ভাড়া বহন করলে বর্তমানে একজন জর্ডানগামী শ্রমিকের অভিবাসন খরচ পড়ে মাত্র ১৫ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ২৬ হাজার ৮০০ টাকা। বেসরকারি সংস্থাগুলো বিদেশি নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে আরো বেশি শ্রমিকের কাজের সুযোগ পাওয়ার জন্য গন্তব্য দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালিয়ে থাকে। কিন্তু বিওইএসএল এ ধরনের কোনো কার্যক্রম নেই।