শান্তিচুক্তির সুবাতাস

পাহাড়ে কৃষি-পর্যটনে এগোচ্ছে অর্থনীতি

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পার্বত্য জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতি মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় শান্তিচুক্তি। এরপর থেকে, নানা উদ্যোগে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে পার্বত্য জনপদে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির সব ধারা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপদে।

দৃশ্যমান অগ্রগতি এসেছে পর্যটন, কৃষি, যোগাযোগ, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে। কৃষি ও পর্যটন অর্থনীতিতে ভর করে এগোচ্ছে পাহাড়ের অর্থনীতি। চুক্তি পরবর্তী সময়ে খাগড়াছড়ির যোগাযোগ ও শিক্ষাখাত অনেকটাই বদলে গেছে। উন্মুক্ত হয়েছে পর্যটনের দ্বার। ২০১৭ সাল থেকে মাতৃভাষায় পাঠ্যবই পাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘শান্তি চুক্তির পরে পাহাড়ের নিরাপত্তার সংকট দূর হয়েছে। সাজেক, আলুটিলা, রিছাং ঝরনাসহ নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র উঠেছে। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’ চুক্তি-পরবর্তী সময়ে পার্বত্য জনপদে শিক্ষার বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন বলেন, চুক্তি-পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃভাষা বই সরবরাহ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় পাঠদান করানো হচ্ছে। নতুন বছরে শুরুতে ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীকে মাতৃভাষা বই দেওয়া হবে।’ এদিকে কৃষি খাতে উদ্যোগের কারণে আগ্রহ বেড়েছে মানুষের, বলছেন কর্মকর্তারা। আবাদ বেড়েছে আম, মাল্টা, কলাসহ নানা ধরনের ফলের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার জানান, পাহাড়ে ফলদ বাগান গড়ে উঠেছে। উন্নত জাতের ধানের চাষ হচ্ছে। সরকার এখানে প্রনোদনা কর্মসূচি এবং রাজস্ব খাতের মাধ্যমে কৃষকদের বীজ ও সার সহায়তা দিচ্ছে। ক্ষুদ্র কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহী হয়েছে। পার্বত্য এলাকায় সার্বক উন্নয়নে জেলা প্রশাসক সূত্র বলছে, শান্তি চুক্তির ফলে সম্প্রীতি ও আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়েছে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মাঝে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামন বলেন, ‘শিক্ষা, কৃষি, সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। পর্যটন শিল্পের খাত বিকশিত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সীমান্ত সড়ক নির্মিত হওয়ায় অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ জনপদে সম্প্রীতি-সৌহার্দ্য বজায় থাকলে পাহাড়ে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬ বছর পূর্তি আজ। দীর্ঘদিনের সংঘাত থামাতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোনো তৃতীয় পক্ষ বা আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই চুক্তি হয়।