ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৫% মানুষের হিসাব আছে

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২৫% মানুষের হিসাব আছে

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিধি। প্রতি মাসে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিও। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথা ব্যাংক, ফযসভ, ক্ষুদ্রঋণ ও ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট বা হিসাব আছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮টি। জনসংখ্যার হিসাবে যা ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলায় নারী ও পুরুষের ব্যবধান খুব বেশি নয়। এর মধ্যে পুরুষের হিসাব রয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৪টি আর নারীর হিসাব রয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার ৪০২টি। আর হিজড়া জনগোষ্ঠী থেকে ব্যাংক হিসাব রয়েছে ১ হাজার ৩১৮ জনের। প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। মূলত বিবিএস জনশুমারির আগের ১২ মাসে যেসব হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করেছে তাদের তালিকাভুক্ত করেছে। বিবিএসের হিসাব বলেছে, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাবধারীদের মধ্যে ৩১ দশমিক ০৭ শতাংশ হচ্ছে পুরুষ এবং ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ নারী। এর মধ্যে গ্রামে রয়েছে হিসাবধারীদের ২২ দশমিক ৫১ শতাংশ আর শহরে ৩১ দশমিক ২৬ শতাংশ। বিভাগওয়ারী হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগের মানুষের। এই বিভাগের ২৮ দশমিক ১৭ শতাংশ মানুষের হিসাব রয়েছে। এর পরই রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান। এই বিভাগের ২৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ মানুষের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব রয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে খুলনা বিভাগ। এই বিভাগের ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ মানুষের ব্যাংক হিসাব রয়েছে। আর সবচেয়ে কম ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ ব্যাংক হিসাব রয়েছে সিলেট বিভাগের মানুষের। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশে ৩৯ দশমিক ১১ শতাংশ ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি মানুষের রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট। এর মধ্যে পুরুষ হিসাবধারীর হার ৫২ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং নারী হিসাবধারীর হার ২৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। স্বাধীনতার আগে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাংকব্যবস্থা মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি হাতে গোনা কয়েকটি শহরে সীমাবদ্ধ ছিল। দেশ স্বাধীনের পর সরকারি ব্যাংকগুলো বিভাগীয় শহর পর্যায়ে শাখা খুলতে শুরু করে। ১৯৮৩ সালে বেসরকারি খাতের ব্যাংক চালু হওয়ার পর শুরু হয় জেলা শহরে শাখা খোলা। শহরে একটি নতুন শাখা হলে গ্রামেও সমান শাখা খুলতে হবে, ২০১১ সালে এমন সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বিস্তৃত হয় ব্যাংক শাখা। ব্যাংকিং সেবা চলে যায় মানুষের আরো কাছাকাছি। ব্যাংকের বাইরে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও দেশজুড়ে নানা ধরনের আর্থিক সেবা প্রদান করছে। ব্যাংকের মতো এসব প্রতিষ্ঠানেও মেয়াদি আমানত রাখা যায়, মিলছে ব্যাংকঋণও। সারা দেশে ৩০১টি শাখার মাধ্যমে আর্থিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের পরিধি এখনও শহরকেন্দ্রিক। তবে বিভাগের হিসেবে ব্যাংক, ফযসভ বা যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ময়মনসিংহের মানুষ। এ বিভাগের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ মানুষের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা কম হওয়ায় তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ কম দেখান, আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ক্ষতির কথা চিন্তা করে সেখানে তাদের কার্যক্রম কম চালায়। জনশুমারির হিসাবে দেখা যায়, নিজ বিভাগের জনসংখ্যার তুলনায় আর্থিক খাতে সবচেয়ে বেশি হিসাবধারী রয়েছে ঢাকা বিভাগে ২৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ বিভাগের মোট ৯১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮০ জন মানুষ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের হিসাব খুলে আর্থিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বিভাগের হিসাবে সবচেয়ে কম রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এ বিভাগের মাত্র ১৭ দশমিক ২৩ শতাংশ বা ১৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪৭৪ জন মানুষ ব্যাংক বা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাব খুলেছেন। সিলেট বিভাগও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকাদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। এ বিভাগের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৩ লাখ ২২ হাজার ৯৩০ জন বা ১৭ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলা রয়েছে। ময়মনসিংহের মানুষের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিমুখ হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ব্যাংকাররা। ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এসএমই খাত বিশেষজ্ঞ আরফান আলী বলেন, ‘ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা কম। ফলে তারা ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতেও আগ্রহী নয়। এ কারণে ব্যাংকগুলোও সেখানে শাখা খোলার ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহী না।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত