ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিট পোশাক রপ্তানি

চীনকে ছাড়িয়ে শীর্ষে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিয়ান স্ট্যালিন

আশির দশকের গোড়ার দিকে দেশে পোশাক শিল্পের উত্থান শুরু। আর নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই পাট ও পাটজাত পণ্যকে হটিয়ে তৈরি পোশাক দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ১৯৯৪ সালে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ছিল ১৮৮ কোটি ডলারের। গত বছর সেই রপ্তানি বেড়ে ৪ হাজার ৫৭০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। তার মানে, গত ২৮ বছরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ২৪ গুণ। ধারাবাহিকভাবে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববাজারে গত বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে বেশি হিস্যা (মার্কেট শেয়ার) ছিল চীনের, ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। তারপরেই বাংলাদেশের অবস্থান, বৈশ্বিক বাজারে হিস্যা ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ছাড়া ভিয়েতনামের হিস্যা ৬ দশমিক ১, তুরস্কের সাড়ে ৩ এবং ভারতের ৩ দশমিক ১ শতাংশ। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী শিল্পখাত। ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধুমাত্র তৈরি পোশাক শিল্প থেকে রপ্তানির পরিমাণ ৪২.৬১৩ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮১.৮১ ভাগ। ২০২৩ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে ২৭ দেশের এই ব্লকে বাংলাদেশের নিট পোশাকের রপ্তানিমূল্য ছিল ৮৩১ কোটি ইউরো। একইসময়ে চীনের রপ্তানিমূল্য ছিল ৮২৭ কোটি ইউরো। এমনটাই জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাট। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে নিট পোশাক রপ্তানিতে বৈশ্বিক জায়ান্ট চীনকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। দেশের পোশাক খাত প্রথমবারের মতো এই অর্জন করেছে। ইউরোপের বাজারে ডেনিম রপ্তানিতে বাংলাদেশের আধিপত্য অর্জনের পরেই এলো উল্লেখযোগ্য এ অগ্রগতি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে ২৭ দেশের এই ব্লকে বাংলাদেশের নিট পোশাকের রপ্তানিমূল্য ছিল ৮৩১ কোটি ইউরো। একই সময়ে চীনের রপ্তানিমূল্য ছিল ৮২৭ কোটি ইউরো। অর্থাৎ, সামান্য ব্যবধানে এগিয়েছে বাংলাদেশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে নিট পোশাক রপ্তানিতে বৈশ্বিক জায়ান্ট চীনকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো এই অর্জন করেছে দেশের পোশাক খাত। ইউরোপের বাজারে ডেনিম রপ্তানিতে বাংলাদেশের আধিপত্য অর্জনের পরেই এলো উল্লেখযোগ্য এ অগ্রগতি। ইইউ এর আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে ২৭ দেশের এই ব্লকে বাংলাদেশের নিট পোশাকের রপ্তানিমূল্য ছিল ৮৩১ কোটি ইউরো।

একই সময়ে চীনের রপ্তানিমূল্য ছিল ৮২৭ কোটি ইউরো। অর্থাৎ, সামান্য ব্যবধানে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই অর্জন সত্ত্বেও বাজারটিতে বাংলাদেশ ও চীন উভয়েরই নিট পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশের কমেছে ২০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অন্যদিকে, বিশ্বের বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক চীনের কমেছে ২১ দশমিক ৫১ শতাংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হওয়া, এবং সেই প্রেক্ষাপটে চাহিদার মন্থরগতিই মূলত এজন্য দায়ী। ইউরোস্ট্যাটের তথ্যেও, ইইউ’র নিট পোশাক খাতের আমদানি চাহিদায় মন্দাভাবে চিত্র উঠে এসেছে। জানুয়ারি- সেপ্টেম্বর সময়ে যা ১৭.৭১ শতাংশ বা ৩ হাজার ১৯৪ কোটি ইউরোতে নেমে আসছে। আগের বছরের একই সময়ে চাহিদা ছিল ৩ হাজার ৮৮২ কোটি ইউরোর। ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক পণ্যের মন্থর চাহিদা অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে এই অঞ্চলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বছরওয়ারি হিসাবে ১৭.৬৬ শতাংশ কমে মোট ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ইউরো হয়েছে। চীনের মোট রপ্তানিও একই সময়ে ২০.১৭ শতাংশ কমে ১ হাজার ৭১২ কোটি ইউরো হয়েছে। পোশাক রপ্তানিকারকরা এ শিল্পটি ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পশ্চিমা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি কমা এবং সুদহার স্থিতিশীল হওয়ার ঘটনাকে তারা ইতিবাচক নির্দেশক বলে মনে করছেন। এতে সামনের দিনগুলোয় পশ্চিমা ভোক্তারা পোশাকের পেছনে বেশি খরচ করবেন এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতির (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, ইইউ’তে মন্থর চাহিদার মধ্যেই চলতি বছরে প্রথমবারের মতো বাজারটিতে নিটওয়্যার রপ্তানিতে প্রথম স্থান অর্জন হয়েছে বাংলাদেশের। ‘এর প্রধান কারণ, চীন আর এখন লো-এন্ডের পোশাকপণ্য উৎপাদন করে না। অন্যদিকে বাংলাদেশ এই খাতে শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তুলেছে।’

আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জিং বৈশ্বিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’গত সোমবার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন- বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান আগের বছরের একই মাসের তুলনায় গেল নভেম্বরে রপ্তানি আয় কম হওয়ার জন্য প্রধানত তিনটি কারণ উল্লেখ করেন। এগুলো হলো- পোশাকের বৈশ্বিক চাহিদায় গতিমন্থরতা, ইউনিট মূল্যের পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের ফলে নভেম্বরে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া। তবে সামনের মাসগুলোয় পোশাক খাতের জন্য কিছু ইতিবাচক লক্ষণ রয়েছে, কারণ ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও থ্যাকস গিভিং ডে’র বিক্রিতে কিছু ব্র্যান্ডের পণ্যের স্টক শেষ হয়ে গেছে, তারা এখন নতুন করে পণ্যসম্ভার গড়ে তুলছে। ডিসেম্বরেও আছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব- বড়দিন ও বক্সিং ডে। উৎসবকালীন এই সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোয় ব্যাপক কেনাকাটা হয়’- যোগ করেন তিনি। পোশাক খাতের এই নেতা বলেন, মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেতে থাকায় প্রায় ১৮ মাস পরে বিভিন্ন পশ্চিমা দেশ সুদহার বাড়ানো বন্ধ রেখেছে। এতে প্রবৃদ্ধির জন্য অনুকূল ভিত্তি তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানির দাম ও পণ্য পরিবহনের খরচও কমছে।