মৌসুম শুরু হওয়ার অপেক্ষা। কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করবে নতুন পেঁয়াজ। কিন্তু তার ঠিক আগে আগে পেঁয়াজের দাম আবার মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার খবর প্রকাশের পর থেকে এক লাফে পণ্যটির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আগের সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণ দাম বিক্রি হচ্ছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। সকাল থেকে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত শুক্রবার রাত থেকেই পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে দেশি পেঁয়াজের কমতি থাকায় ভারতীয় ও চীনা পেঁয়াজের প্রতি আগ্রহ ক্রেতাদের। যে কয়েকটি দোকানে দেশি পেঁয়াজ পাওয়া গেছে তাও দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা।
আড়ত থেকে আগের দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিদপ্তর। গত শুক্রবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, শ্যামবাজার, বাড্ডা ও জোয়ারসাহারা বাজারে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা; শুক্রবার যা ছিল ১১০ তেকে ১২০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা; গত শুক্রবার ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল; যা আজ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ গতকাল ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও আজ সকালে ১৬০ ও বিকাল গড়াতেই ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে দাম বাড়ায় বিক্রেতারাও পেঁয়াজ বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন। প্রতিটি দোকানে অল্পসংখ্যক পেঁয়াজ সামনে সাজিয়ে রেখেছেন। তবে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় বিপাকে ক্রেতারা। তারা বলেন, ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ পেঁয়াজের দাম একলাফে দ্বিগুণ হওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের আড়ত ও হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার খবরে প্রতি বস্তায় কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে। দিনাজপুরের হিলিতে গত শুক্রবার কেজিপ্রতি ৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ১৮০ টাকা।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে কারসাজি দায়ী- বলেছেন পেঁয়াজ আমদানিকারক ও শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাজেদ।
তিনি বলেন, ‘বাজারে সরবরাহ অনেক কমে গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাজারে নতুন পেঁয়াজ চলে আসবে। তখন স্বাভাবিকভাবেই দাম কমে আসবে।’ কারসাজি বন্ধে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজার হঠাৎ অস্থির হয়ে ওঠায় দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে খবর পেয়ে অভিযান শুরু করি। কয়েকটি আড়তে গিয়ে প্রমাণ পেয়েছি। আগে কেনা পেঁয়াজ তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। এখন পর্যন্ত তিনটি আড়তকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অভিযানে আমরা দেখতে পাই মজুত থাকার পরও দাম বাড়ানোর জন্য অনেক আড়ত পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছে। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী এসে পেঁয়াজ কেনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে আমরা দাঁড়িয়ে থেকে আগের দামে পেঁয়াজ বিক্রির ব্যবস্থা করেছি। এদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অন্যতম রুট যশোরের বেনাপোলের একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা। গত বৃহস্পতিবার এক পত্রের মাধ্যমে ভারত সরকার সে দেশে পেঁয়াজ সংকট দেখিয়ে আগামী ৩১ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে বেনাপোল উদ্ভিদ সংগনিরোধ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে ভারত থেকে সাড়ে ৫০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি হয়েছে, যার মধ্যে সর্বশেষ ৫ ডিসেম্বর ৫৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে রূপালী এন্টারপ্রাইজের মালিক মিন্নু মিয়া। কিন্তু গত দুই দিনের ব্যবধানে ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ও দেশি পেঁয়াজের মজুত কম থাকার অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। একই রকম তথ্য পাওয়া গেছে চট্টগ্রামেও।
সেখানকার পাইকারি বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জে শনিবার কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় ২১০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়। চীন থেকে আমদানি করা বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়। খুচরায় প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ২৪০ টাকায়। চীনা পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে ১৬০ টাকা করে। তবে চট্টগ্রামে বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ টাকা জরিমানাও করেছে সংস্থাটি। গত শনিবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর চৌমুহনী এবং খাতুনগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করা হয়। অভিযানে নগরীর চৌমুহনী কর্ণফুলী মার্কেটে অভিযান চালিয়ে ফারুক স্টোরকে ৩০ হাজার টাকা এবং আলিফ ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে নগরীর খাতুনগঞ্জে বরকত ভান্ডারকে ২০ হাজার টাকা, এএইছ ট্রের্ডাসকে ১০ হাজার টাকা এবং একে ট্রেডার্সকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক নাসরিন আক্তার ও রানা দেবনাথ।