উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ
তবুও পেঁয়াজ আমদানিতে বিশ্বে ১ নম্বর বাংলাদেশ
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিয়ান স্ট্যালিন
পেঁয়াজের বাজার এখনো বেশ চড়া। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নজরদারি জোরদার করাতে কিছু এলাকায় কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা দর কমেছে। তবে ফের বাড়তে শুরু করেছে আলুর দাম। আর দাম দ্বিগুণ হওয়ার এক দিনের মাথায় বড় দরপতন হয়েছে কাঁচামরিচের। এদিকে সয়াবিন তেলের মতো ঘোষণা ছাড়াই বেড়েছে প্যাকেটজাত চিনির দাম। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতায় দর কিছুটা কমলেও পেঁয়াজের সরবরাহ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকল্প কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আসবে, ডলার সংকটে ব্যাংক এলসি দেবে কি না, এলসি খোলার পর জাহাজে আসতে কতদিন লাগবে, নতুন পেঁয়াজের ফলন কেমন হয়েছে- এসব নিয়ে আলোচনা চলছে তাদের মধ্যে। তাতে বাজারের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করছেন তারা। পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। তারপরও পেঁয়াজ আমদানিতে বিশ্বে ১ নম্বর বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৪০টি দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করে নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশ শুধু পেঁয়াজের বড় একটি বাজারই নয়, বরং পরিমাণের দিক থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে বিশ্বে ১ নম্বরে রয়েছে দেশটি। দেশভিত্তিক পেঁয়াজ আমদানির তথ্য তুলনা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৭ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করে। ওই বছর আর কোনো দেশ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেনি। জাতিসংঘের পণ্যবাণিজ্য পরিসংখ্যানের তথ্যভান্ডার (ইউএন কমট্রেড) অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশের পর যে দেশটি সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করেছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্র। তাদের আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৬০ হাজার টন। এরপরের অবস্থানে ছিল মালয়েশিয়া। স্থানীয় উৎপাদনের দিক থেকেও বাংলাদেশ খুব পিছিয়ে নেই। পেঁয়াজ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম, তবে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়ে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ফলে রান্নায় অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের আমদানি বাড়ছে, তবে এই আমদানির পরিমাণ এতটাই যে তা বিশ্বতালিকায় বাংলাদেশকে শীর্ষে নিয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মানুষের আয় বৃদ্ধি ও পেঁয়াজের ব্যবহারের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৩ সাল শেষ হতে এক মাস বাকি থাকতেই আগের বছরের আমদানির রেকর্ডও ভেঙে গেছে। এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ১১ মাসে পেঁয়াজের আমদানি ৮ লাখ ৬৪ হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ ২০২৩ সাল শেষেও আমদানির শীর্ষতালিকায় থাকবে বাংলাদেশের নাম, এমনটা ধরে নেওয়া যায়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশের বাজারে প্রথম আমদানি হয় ডাচ পেঁয়াজ। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে হল্যান্ড পেঁয়াজ সমিতি জানিয়েছিল, ওই সময় নেদারল্যান্ডসের পেঁয়াজ রপ্তানিতে শীর্ষ ১২ গন্তব্যের একটি ছিল বাংলাদেশ। অবশ্য ওই বছরের মার্চে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। ফলে নেদারল্যান্ডস থেকে মুখ ফিরিয়ে আবার ভারত থেকে আমদানি শুরু করেন এ দেশের পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা। কারণ, সবচেয়ে সহজ ও কম দামে পেঁয়াজ আনা যায় প্রতিবেশী এই দেশ থেকে, যেটি আবার বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশ।