সংকটের মধ্যেও বাড়ছে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিয়ান স্ট্যালিন

সাম্প্রতিক সময়ে নানা সংকট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জাঁতাকলে পিষ্ট নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছেন না। ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা জমানো তো দূরের কথা, অনেকে আগের জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতেও এক শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে, যা সমাজে বৈষম্যের প্রতিফলন বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। দেশের ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকার বেশি রয়েছে- এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টি। এক বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোটি টাকার এ হিসাব ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৫২০টি। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ৬৬টি। আর তিন মাসে বেড়েছে ৩২টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। দেশে মূল্যস্ফীতি এখন স্মরণকালের সর্বোচ্চ। চলছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের অভিঘাত। নিম্নআয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে, সঞ্চয় কমেছে। জীবন নির্বাহে ভোগান্তি বেড়েছে। তবুও বেড়েছে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা। তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৪। এসব হিসাবে জমা আছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার হিসাবে জমা আছে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতের মোট আমানতের ৪২ দশমিক ৩৫ শতাংশ কোটি টাকার হিসাবধারীদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৭৬০টি, যেখানে জমা ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২২১টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৬ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৭৪টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৯৬৮টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ২৭৪টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯১৯টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫১২টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৪৩টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭৪৭টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ১ হাজার ৭৭৮টি। চলমান আর্থিক সংকটের মধ্যেও ব্যাংক খাতে কোটি টাকার হিসাব বাড়ছে। বর্তমানে ব্যাংকে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে- এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টি। এসব হিসাবে জমা আছে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪২ দশমিক ৩৫ শতাংশ কোটি টাকার হিসাবধারীদের। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি। এই হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৩২টি। এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৪টি। এসব হিসাবে জমা আছে ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। আর জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৯২টি। এসব হিসাবে জমা ছিল ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে মোট হিসাব বেড়েছে ৭ হাজার ৬৬টি। এক বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোটি টাকার হিসাব ছিল এক লাখ ৬ হাজার ৫২০টি। গত এক বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে পেছালেও এই সময়ের মধ্যে বেড়েছে কোটিপতির সংখ্যা। গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকা বা তার উপরে বাংক হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৭০৬৬টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তথ্য বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে কোটি টাকার এ হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৫২০টি। বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ৬৬টি। এর মধ্যে গত তিন মাসেই বেড়েছে ৩২টি! অর্থাৎ, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে দেশে বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকার বেশি রয়েছে, এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৬টি।