ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সবুজ ব্যাংকিংয়ে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

সবুজ ব্যাংকিংয়ে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

এক বছরের ব্যবধানে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে সবুজ ব্যাংকিং। কারণ, ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে সবুজ এবং টেকসই আর্থিক খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ বিতরণ ৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা বেড়েছে। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রন্তিকে (এপ্রিল-জুন) এই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে মোট ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, গত বছর যা ছিল ৩৪ হাজার ২৯৪ কোটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনমতে, ২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) তুলনায় জুন প্রান্তিকে এই দুই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১৬ কোটি টাকা। সবুজ ব্যাংকিং হলো- সামাজিক এবং নৈতিকভাবে দায়িত্বশীল ব্যাংকিং, যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কম হবে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম হবে পরিবেশবান্ধব। সরকার জনগণকে সবুজ ব্যাংকিং অনুশীলনে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। পরিবেশ রক্ষায় ২০১১ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক সবুজ ব্যাংকিংয়ের জন্য নীতি নির্দেশিকা জারি করে। কিন্তু নীতি কার্যকর করার ১২ বছরেও সবুজ ব্যাংকিং শতভাগ নিশ্চিত হয়নি। এই নীতি বাস্তবায়ন হলে পেপারলেস ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। ফলে গাছকাটা কমবে, যা কার্বন নিঃসরণ কমাতে কাজ করবে। অর্থাৎ পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত হবে। পেপারলেস ব্যাংকিং-ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেনের সংখ্যা বাড়বে। ব্যাংকারদের মতে, এই বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। যদিও ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীর হওয়ায় আগামী প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ কমে আসবে। একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শিল্প-কারখানাগুলোর মেশিনারিজ আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে। এখন দেশে নির্বাচনকালীন বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা ও ডলার সংকটে আমদানি ব্যাপক কমেছে, যা আগামী সময়ে এসব খাতের ঋণের প্রবাহ কমতে পারে। তিনি আরো বলেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডারও কমেছে, যার ফলে নতুন করে শিল্প-কারখানা ও ক্যাপিট্যাল মেশিনারিজ আমদানি অনেকটা কমে গেছে। সামনের এই খাতে বিনিয়োগও কমবে। সাসটেইনেবল বা টেকসই ফাইন্যান্স বলতে বোঝায় এমন এলাকা এবং এমন পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করা, যা বাহ্যিক কার্বন নিঃসরণ এবং অভ্যন্তরীণ কার্বন ফুটপ্রিন্ট হ্রাসে সাহায্য করে। সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ ঘটা ইস্পাত, কাগজ, সিমেন্ট, রাসায়নিক, সার, বিদ্যুৎ, টেক্সটাইল ইত্যাদির মতো শিল্প প্রকল্পে অর্থায়নের অন্যতম প্রধান উৎস ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সবুজ ও টেকসই আর্থিক খাতে বিনিয়োগ হয়।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ৫ শতাংশ গ্রিন ফাইন্যান্স ও ২০ শতাংশ সাসটেইনেবল বা টেকসই খাতে বিনিয়োগ করার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করেছে ৩ হাজাার ৯২৮ কোটি টাকা এবং সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সে বিনিয়োগ হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার যথাক্রমে ৬ দশমিক ১৬ এবং ১৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। উল্লেখ্য বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত গতিশীল অর্থনীতির একটি দেশ। যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রায়ই ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভয়াবহ। যার জন্য সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কঠোর নির্দেশনা প্রয়োজন। সামাজিকভাবে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে। সবুজ ব্যাংকিং অসামান্য ভূমিকা পালন করতে পারে পরিবেশ সুরক্ষায়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সবুজ ব্যাংকিং একটি অপরিহার্য বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও রয়েছে ঝুঁকিতে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত