বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৩ হাজার ৫১৬ জন। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৪ লাখ ৮ হাজার ৯৮৪ কোটি। হিসাব অনুযায়ী, দেশের সব ব্যাংক মিলিয়ে যত টাকা ঋণ বিতরণ করেছে তার ২৭ দশমিক ৭৬ ভাগ রয়েছে এই ৩ হাজার ৪১০ জনের হাতে। ২০ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১০ হাজার ৪২১ জন, যাদের কাছে আছে ৬ লাখ ২৩ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। যা ব্যাংক খাতের মাধ্যমে বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪২ দশমিক ৩২ শতাংশ। ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৮৭১ জন। তাদের কাছে বিতরণ করা হয়েছে ৮ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী ব্যাংকের মোট ঋণের ৬০ দশমিক ৬২ শতাংশ রয়েছে এসব গ্রাহকের কাছে। ১ কোটি টাকার ওপরে ঋণ নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬০ জন। তাদের হাতে রয়েছে বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭৪ দশমিক ১৮ শতাংশ। অঙ্কে যার পরিমাণ ১০ লাখ ৯২ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণের ৭৪ দশমিক ১৮ শতাংশই ভোগ করছেন কোটিপতিরা। বাকি ২৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জুটেছে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি গ্রাহকদের ভাগ্যে। যাদের ঋণসীমা ১ কোটি টাকার নিচে। হিসাব বলছে, কোটি টাকা ঋণের গ্রাহকসংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার জন হলেও তুলনামূলক স্বল্প ঋণের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ১৫ হাজার। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৃহৎ ঋণের চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ক্ষুদ্রঋণের গ্রাহকরা। কিন্তু দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন ছোট উদ্যোক্তারাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের আমানতকারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৬৮ জন। তাদের জমাকৃত টাকার পরিমাণ ১৭ লাখ ১৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। একই সময়ে ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ১২৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংক। যেখানে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার ৮০৩ জন। অর্থাৎ ১২ জনের জমাকৃত টাকা ভোগ করছেন মাত্র একজন। এটা ছিল সার্বিক হিসাব। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকঋণের বেশিরভাগই ভোগ করছেন কোটিপতি গ্রাহক। বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের হাজারো উদ্যোক্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার জানান, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক, মুটে, মজুর, দোকানদারের খুব বেশি ঋণের প্রয়োজন হয় না। তারা কখনও ৫০ হাজার, ১ লাখ বা ব্যবসাভেদে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণ করেন। কিন্তু তাদের পেছনে সময় দিতে চান না ব্যাংকাররা। তাই ছোটদের ঋণ পাওয়ার জন্য গলদঘর্ম হওয়ার উদাহরণ ভুরি ভুরি। নানা শর্তের কারণে ব্যাংকবিমুখ হাজারো ক্ষুদ্র গ্রাহক। কিন্তু সম্পর্কের খাতিরে অথবা কমিশনের মাধ্যমে কোটিপতিরা খুব সহজেই ঋণ পেয়ে যান ব্যাংক থেকে। এর ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের হাজারো মানুষ এবং ছোট চাকুরেদের জমানো টাকার সিংহভাগ সুবিধা ভোগ করেন উপরতলার মানুষ।