পরিবেশবান্ধব পোশাকশিল্প গড়ার পথে আরো অগ্রগতি হয়েছে। সবুজ কারখানার দিক দিয়ে তৈরি পোশাক খাতের অগ্রগতিতে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। অবশেষে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে ডাবল সেঞ্চুরির পর এবার মাইলফলকে পৌঁছাল বাংলাদেশ। বিষয়টি হলো, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ২০৬ পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে। রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৪ ভাগ নেতৃত্ব দেয় দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। আজ থেকে ১০ বছর আগে রপ্তানির প্রধান এ খাতে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার সংখ্যা ছিল মাত্র একটি। সেই সংখ্যা বেড়ে এখন ২০৬টিতে দাঁড়িয়েছে। পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, সবুজ কারখানা পোশাক খাতের রপ্তানি বাড়াতে বড় অবদান রাখছে। গত বুধবার পরিবেশসম্মত সবুজ কারখানার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন বা লিড সনদ পেয়েছে আরো তিন পোশাক কারখানা। এ নিয়ে দেশের সবুজ কারখানা বেড়ে হলো ২০৬টি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) এ সনদ দেয়। পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানা বাংলাদেশে যাত্রা শুরু। পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে দুই শতাধিক পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে উঠেছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাশাপাশি শিপইয়ার্ড, জুতা ও ইলেকট্রনিক খাতেও এখন পরিবেশবান্ধব কারখানা আছে। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে পরিবেশবান্ধব, যদিও সংখ্যায় কম। বিশ্বের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দেয়। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। এই সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। সেজন্য নতুন ভবন নির্মাণ কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করে আবেদন করা যায়। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউএসজিবিসি। সংস্থাটির অধীন কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনার কেন্দ্র ইত্যাদি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা হিসেবে গড়ে তোলা যায়। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে পয়েন্ট ৮০-এর ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে। বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই ইউএসজিবিসির অধীন সনদ পেয়েছে। বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে লিড সনদ পাওয়া ২০০ পোশাক ও বস্ত্র কারখানার মধ্যে ৭৩টি লিড প্লাটিনাম, ১১৩ গোল্ড, ১০ সিলভার ও চারটি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে। লিড সনদে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গ্রিন টেক্সাইল লিমিটেড এখন বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানা। ১১০ নম্বরের মধ্যে তারা পেয়েছে ১০৪। শুধু তারাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া পরিবেশবান্ধব ১০টি কারখানার মধ্যে আটটি বাংলাদেশের। ২০১২ সালে পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে প্রথম পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার যাত্রা শুরু দেশে। কারখানাটি পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে স্থাপিত ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। এরপর থেকে বাড়তে থাকে সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা। বিজিএমইএ-বিকেএমইএ নেতারা জানান, সবুজ কারখানা মানে বিশ্ববাজারে ক্রেতার কাছে আলাদা কদর তৈরি হওয়া। এসব কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের গায়ে গ্রিন ট্যাগ সংযুক্ত থাকে। অর্থাৎ, পণ্যটি কোনো সবুজ কারখানায় উৎপাদিত হওয়ায় বিদেশি ব্র্যান্ড এবং ক্রেতার কাছে আস্থা বাড়ে। সবুজ কারখানায় উৎপাদিত পণ্য নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিও করা যায়। সবুজ কারখানার সনদ দেশ ও পোশাক খাতের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াতে সহায়তা করে।
বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবান্ধব কারখানা গাজীপুরে
গ্লোবাল লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) গ্রিন ফ্যাক্টরি র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের আরএমজি ফ্যাক্টরি। গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অবস্থিত এসএম সোর্সিং ফ্যাক্টরি মোট ১১০-এর মধ্যে ১০৬ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান দখল করে। খবর বাসসের।
এর আগে ১০৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রিন টেক্সটাইলস লিমিটেড ইউনিট চতুর্থ স্থান দখল করেছিল। বাংলাদেশ গার্মেন্ট খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি র্যাঙ্ককৃত কারখানার ৫৪টি এখন এখানে অবস্থিত।