অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তিন পরামর্শ আইএমএফের বাড়বে রিজার্ভ
২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড় পেতে বড় সংস্কারের শর্ত আইএমএফের
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড় পেতে ২০২৪ সালে বাংলাদেশকে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে আগামী জুন মাসে। এর আগে আইএমএফ ঋণ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যালোচনা করবে। তৃতীয় কিস্তির জন্য যেসব সংস্কার করতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে করছাড় কমানো, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, ভর্তুকি যৌক্তিক করার কৌশল নির্ধারণ এবং খেলাপি ঋণ কমানো। চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের পর্যালোচনা আগামী ডিসেম্বর মাসে। তখন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তালিকা নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা, ব্যাংক খাতের তদারকিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন, নীতি সুদহারের কাঠামো ঠিক করা; রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ঝুঁকি কমানো- এসব বিষয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ মার্কিন ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। ওয়াশিংটনে আইএমএফের প্রধান কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। আজ বৃহস্পতিবার এই অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে আসতে পারে। ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ তিনটি কর্মসূচির আওতায় পালন করার জন্য বাংলাদেশকে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। আইএমএফের ওই অর্থ পেতে ২০২৪ সালে বড় ধরনের বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, আগামী ২০২৪ সালটি হতে হবে আইএমএফের সংস্কারের শর্ত পূরণে দৃশ্যমান উদ্যোগের বছর।
আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে, আগামী জুন মাসের মধ্যে রাজস্ব, আর্থিক, জ্বালানি, সামাজিক নিরাপত্তা- এই চারটি খাতেই দৃশ্যমান বড় সংস্কার করতে হবে। রাজস্ব খাতে সংস্কারের অন্যতম হলো আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং শুল্ক খাতে বছরের পর বছর যেসব কর ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা কমাতে হবে। এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য সামস উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এ লক্ষ্যে একটি দল কাজ করছে। আগামী বাজেটে এর প্রতিফলন থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। আয়কর খাতে কত ছাড় দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি এনবিআর তার হিসাব করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাবে, দেশে বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার আয়কর ছাড় দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৮৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার করপোরেট কর ছাড় দেওয়া হয়। বাকি প্রায় সাড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার ছাড় দেওয়া হয় ব্যক্তিপর্যায়ের করদাতাদের ক্ষেত্রে। দুই শতাধিক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৯৭টি খাতে কর ছাড় দেওয়া হয়। সমাজকল্যাণ, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিল্প খাতে সহায়তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সুরক্ষা, শেয়ারবাজার চাঙা করা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহায়তা, রপ্তানি উন্নয়ন, শিক্ষা সহায়তাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এসব কর ছাড় দেয় এনবিআর। এ ছাড়া চলতি অর্থবছর থেকেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায়ের যে শর্ত আছে, তাতে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা দেখাতে হবে তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগেই। আগামী জুন মাসে চলতি অর্থবছর শেষ হবে। বাজেটে এনবিআরের লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়। তবে আইএমএফ এই লক্ষ্য কমিয়ে বলেছে, ৪ লাখ কোটি টাকা আদায় করলেই হবে। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) অবশ্য মাত্র ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর পেয়েছে এনবিআর। আগামী বাজেটের আগে ভ্যাট ও কাস্টমস শাখায় একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ইউনিট স্থাপন করতে হবে। তবে এনবিআর দুটি এমন ইউনিট স্থাপন করেছে। এসব ইউনিট অবশ্য এখনো পুরোদমে কাজ শুরু করেনি। জুনের আগে সরকারের দেওয়া ভর্তুকির ক্ষেত্রে দুটি বড় শর্ত আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দর ওঠানামার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার একটি ‘দাম নির্ধারণ কৌশল’ তৈরির কাজ করতে হবে সরকারকে।