ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজারে অপরিপক্ক পেঁয়াজ

বাজারে অপরিপক্ক পেঁয়াজ

পেঁয়াজের মূল্য আকাশছোঁয়া। তাই রাজবাড়ীতে সময়ের আগেই অপরিপক্ক পিয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন কৃষক। এতে ভালো মূল্যে পেলেও উৎপাদন কমে যাচ্ছে এবং পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ। দেশের বাজারে আর কিছু দিনের মধ্যেই নতুন পেঁয়াজ ঢোকার কথা রয়েছে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক জায়গায় কৃষকেরা অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছেন। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। আবার কোথাও চুরি ঠেকাতে পেঁয়াজের খেতে বসানো হয়েছে পাহারা। কৃষকেরা অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছেন। রাজবাড়ীর অনেক এলাকায় এমনটি দেখা গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, পেঁয়াজের মৌসুমে প্রত্যেক বছর ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন তারা। তাই বাজারে দাম থাকতেই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা পেঁয়াজ তুলছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে এভাবে দাম থাকলে কিছুটা লাভবান হবো। পেঁয়াজ পরিপক্ক হলে বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ হবে। এখন তুললে বিঘাপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ মণ হচ্ছে। তবে এই দাম তখন আমরা পাবো না। বাধ্য হয়ে বেশি লাভের আশায় আগাম পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি করছি। আশা করছি, এবার কিছুটা লাভের মুখ দেখব।

কৃষক আলতাফ কাজী বলেন, বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ চার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন সংবাদে এক বিঘা জমির পেঁয়াজ তুলেছি। বাজারে ৩ মণ পেঁয়াজ ৪ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখনো তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ রয়েছে। এমন দাম থাকলে সব পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৫ থেকে ২০ দিন পর পেঁয়াজ তুললে এক বিঘাতে ১০ থেকে ১২ মণ বেশি হবে। তবে এমন দাম তো আর পাব না। তাই ইচ্ছা না থাকার পরও অসময়ে অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলতে হচ্ছে। পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি এর আগেও হয়েছে। সিন্ডিকেট না ধরে কৃষকের কাছে এলে কী হবে? কারসাজি বন্ধ করতে হলে অবশ্যই সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে।’ তবে কৃষকের আগাম পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রিতে খুশি ক্রেতারাও। তাদের ভাষ্য, এতে কিছুটা হলেও সরাসরি কৃষক লাভবান হবে। আর পুরোনো পেঁয়াজে কৃষক নয়, সিন্ডিকেট লাভবান হবে।

গোয়ালন্দ বাজারে একাধিক ক্রেতা বলেন, আসুন পুরোনো পেঁয়াজ বর্জন করি। নতুন পেঁয়াজ ক্রয় করি। নতুন পেঁয়াজে লাভবান হবে সরাসরি কৃষক, আর পুরোনো পেঁয়াজে সিন্ডিকেট সদস্যরা। সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রতি সাধারণ ক্রেতাদের নীরব প্রতিবাদ এটা। পেঁয়াজ অসময়ে ওঠালে উৎপাদন কমে যাবে এমন প্রশ্নে এই কৃষক কৃষক বলেন, আমরা একটি সম্মানজনক দাম পাবো এই নিশ্চয়তা কে দেবে? পেঁয়াজের সঠিক দামের নিশ্চয়তা পেলে অসময়ে তুলতাম না। যে কারণে বাজারে বেশি দাম থাকায় অতিরিক্ত লাভের আশায় আমরা কমপক্ষে ১৫ দিন আগেই পেঁয়াজ ওঠাতে শুরু করেছি। আশা করি এবার পেঁয়াজে আমরা কিছুটা লাভবান হবো।

আগাম পেঁয়াজ উঠানোর পক্ষে মতামত দিয়ে একাধিক পেঁয়াজ ক্রেতা বলেন, আসুন আমরা পুরোনো পেঁয়াজ বর্জন করি। নতুন পেঁয়াজ ক্রয় করি। নতুন পেঁয়াজে লাভবান হবে সরাসরি কৃষক আর পুরাতন পেঁয়াজে সিন্ডিকেট সদস্যরা। সিন্ডিকেট সদস্যদের প্রতি সাধারণ ক্রেতাদের নীরব প্রতিবাদ এটা। এ সময় পাশে থাকা বয়স্ক এক ব্যক্তি বলেন, কৃষক আগাম পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করলে ক্রেতা মেনে নিচ্ছে। এতে কিছুটা হলেও সরাসরি কৃষক লাভবান হবে। আর পুরাতন পেঁয়াজে কৃষক নয়, সিন্ডিকেট সদস্যরা লাভবান হবে। সুতরাং নতুন পেঁয়াজ ক্রয় করতে হবে। বালিয়কান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অসময়ে অপরিপক্ক পেঁয়াজ ওঠালে কিছুটা উৎপাদন কমে গেলেও কৃষক সরাসরি বেশি দাম পাবে। আবার এই জমিতে পেঁয়াজ উঠিয়ে হালি পেঁয়াজ অথবা ভুট্টা লাগাতে পারবে। শুধু পেঁয়াজ নয়, যেকোনো ফসলে বেশি দাম পেলে কৃষক থেকে চাষি উৎসাহ পাবে। তবে সিন্ডিকেট নয়, সরাসরি কৃষক দাম পেলে উৎপাদন বেশি হবে। তিনি আরো বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন পর পেঁয়াজগুলো কৃষকেরা তুললে বিঘা প্রতি আরো ১০ থেকে ১৫ মণ বেশি পেত। তারা লাভের আশার এখনি পেঁয়াজ তুলে বাজারজাত করছে। বাজারে পেঁয়াজের মূল্য আকাশছোঁয়া। নিয়ম থেকে নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে সিন্ডিকেট। তাই খুচরা বিক্রেতারা বাধ্য হচ্ছে দাম বাড়াতে। আর অসহায় ক্রেতা বাধ্য হচ্ছে কিনতে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি দামের আশায় অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের অনেক কৃষক। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন পর পেঁয়াজ তুললে বিঘাপ্রতি আরও ১০ থেকে ১৫ মণ বেশি হতো। কৃষকরা লাভের আশায় আগাম পেঁয়াজ তুলে বাজারজাত করছে। অপরিপক্ব পেঁয়াজ তুললে কিছুটা উৎপাদন কমে যাবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত