দ্রুত বেড়ে ওঠা মধ্যবিত্ত ও বিপুল ভোক্তা শ্রেণির কারণে ২০৪০ সালের মধ্যে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে বাংলাদেশ; হবে বিশ্বের নবম বৃহত্তম বাজারও। যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের (বিসিজি) এক সমীক্ষায় বাংলাদেশের অর্থনীতির এমন বেড়ে ওঠার প্রক্ষাপণের তথ্য উঠে এসেছে। একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক পটভূমিতেও বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ।
বিখ্যাত মার্কিন অনলাইন সংবাদমাধ্যম পলিসি ওয়াচার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রশংসা করে বলেছে, অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে। এক নিবন্ধে বলা হয়, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫০ বছরে ২৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’ নিবন্ধে এমিলিয়া ফার্নান্দেজ বলেন, ‘অনেক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেস স্টাডিতে পরিণত হয়েছে, যা খুব কম অর্থনীতিবিদই ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছিলেন।’ নিবন্ধে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সফল যাত্রা একটি ভালো উদাহরণ এবং মাত্র দুই দশকে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং গত ২০ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পাকিস্তানের আড়াই গুণ।’ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাপকাঠিতে যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। এর পেছনে অর্থাৎ দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানে থাকা চার দেশ হলো যথাক্রমে চীন, জাপান, জার্মানি ও ভারত। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির তালিকায় এই পাঁচ দেশই অনুমিতভাবে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
এবার বিশ্বের ৪৬টি দেশের মধ্যে ২০২৪ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। সম্প্রতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিকবিষয়ক সংস্থা মাস্টার কার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের ‘ইকনোমিক আউটলুক : ব্যালেন্সিং প্রাইস অ্যান্ড প্রাইওরিটিস’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এত তথ্য জানানো হয়। কয়েক বছর আগেও মনে করা হতো বাংলাদেশের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারবে না। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাও হয়তো থাকবে স্বল্প মেয়াদের জন্য। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে পড়বে এ দেশ। যদিও ঠিক তার উল্টোটাই ঘটছে এখন। ৬ শতাংশ বা তার বেশি হারে গত এক দশকে বৃদ্ধি পেয়ে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনার কেন্দ্রে, যার প্রমাণ মিলছে বিভিন্ন বৈশ্বিক গবেষণায়।
২০৫০ সালে কেমন হবে বাংলাদেশের অর্থনীতি? বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোর কত কাছে থাকবে বাংলাদেশ? কতটা এগোবে বা কী হারে প্রবৃদ্ধি করবে? কতটা সময় ধরে অব্যাহত থাকবে এ প্রবৃদ্ধি? এ নিয়ে বৈশ্বিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে আশাবাদী হওয়ার মতো বিভিন্ন বার্তা। এতে বলা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী বিশ্বের শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে থাকবে বাংলাদেশ। বাকি দুই দেশ হলো ভারত ও ভিয়েতনাম। তিনটি দেশেরই মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গড় প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ৫ শতাংশ। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আগামী ৩৪ বছরে কতটা শক্তিশালী হবে, তা নিয়ে গবেষণা করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারস (পিডব্লিউসি)। গত মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত ‘দ্য লং ভিউ : হাউ উইল দ্য গ্লোবাল ইকোনমিক অর্ডার চেঞ্জ বাই ২০৫০’ শীর্ষক গবেষণায় এ ধরনের আশাবাদের তথ্য উঠে এসেছে।
২০২২ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে আমেরিকার অন্যতম বৃহত্তম ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বোস্টন কনসালটেটিভ গ্রুপ ‘দ্য ট্রিলিয়ন ডলার প্রাইজ’ শিরোনামে বাংলাদেশের ওপর বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৬-২১ এই সময়ে বাংলাদেশের গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা তার তুলনীয় দেশ ভিয়েতনাম, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে অনেক বেশি ভালো করেছে। বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির ৪৬টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বৈশ্বিক অর্থনৈতিকবিষয়ক সংস্থা মাস্টার কার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের ‘ইকোনমিক আউটলুক : ব্যালেন্সিং প্রাইস অ্যান্ড প্রাইওরিটিস’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এত তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত জিডিপি হার হবে ৬.৩% যা দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল দেশ হবে।
শীর্ষ দ্রুত বর্ধনশীল দেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে ভারতকে যার জিডিপির হার হবে ৬.৪%। তৃতীয় বর্ধনশীল দেশ হিসেবে দেখানো হয়েছে ভিয়েতনামকে (৬.১%) এবং চতুর্থ হিসেবে দেখানো হয়েছে ইন্দোনেশিয়াকে (৫.২%)। এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগামী বছর বাংলাদেশের ভোক্তা মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৭.৩% যা ৪৮টি দেশের মধ্যে চতুর্থ সর্বোচ্চ এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হবে আর্জেন্টিনার (১৫৬.৯%), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তুরস্ক (৫৩.৩%), তৃতীয় সর্বোচ্চ মিশর (২৪.৯%) এবং পঞ্চম সর্বোচ্চ শ্রীলঙ্কার (৬.৯%)। মাস্টর কার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে আগামী বছরের জন্য বিশ্বে ভারতের পর বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ইতিবাচক বলে বিবেচিত। প্রতিবেদন অনুযায়ী আগামী বছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ হবে, যা শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এর আগেই আইএমএফ জানিয়েছে ২০২৩-২৪ সালে বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৬ শতাংশ। অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যানুসারে, এই সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫.৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সরকারের দেয়া তথ্যানুসারে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.০৩ শতাংশ। মাস্টার কার্ড ইনিস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালের তুলনায় আগামী বছর পণ্য আয়ের জন্য এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলে আরো বেশি অর্থ খরচ করবে গ্রাহক। মূলত মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক কার্যক্রম সব স্তরে উন্নীত হতে এ সময় লাগছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় এবং জানানো হয় ২০২২-২৩ সালের অর্থনৈতিক প্রবণতা একেবারে পাল্টে দেবে এই অভিজ্ঞতা। আগামী বছর এই অঞ্চল অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশ্বের বুকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেও এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। মাস্টার কার্ড ইকোনমিক্স ইনস্টিটিউট’র প্রতিবেদনে আগামী বছরের জন্য বিশ্বে ভারতের পর বাংলাদেশকে দ্বিতীয় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা ইতিবাচক বলে বিবেচিত।