অভ্যন্তরীণ ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা

নতুন বছরে চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক খাত!

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি বেড়েছে। তবে আগের তুলনায় রপ্তানি বাড়লেও বর্তমান বাস্তবতায় পোশাক শিল্পে নতুন করে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে বলে এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এবং চীনভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, বর্তমান দুর্বল বিশ্ব অর্থনীতি এবং আরেকটি ভবিষ্যৎ মন্দা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে এ খাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তুলেছে। ‘উন্নয়নের বিষয়সমূহ : পোশাক শিল্পে সামগ্রিক গবেষণা ও নারী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে আসে। দেশের বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইট ক্যাসল পার্টনার্স, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে এ সমীক্ষাটি পরিবেশন করে। সমীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে অগ্রযাত্রা তা এগিয়ে নিতে পোশাক খাতে কী করণীয় ও কী কী বাধা আছে, তা চিহ্নিত করা। আগামী বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেভাবে ধীরে চলো নীতিতে ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন ক্রেতারা, তা ভোগাবে বছরজুড়ে। উদ্যোক্তারা এমন শঙ্কার কথা জানালেও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) বলেছে, আগের নির্বাচনি বছরকেন্দ্রিক অর্থবছরে পোশাক খাতের রফতানি আয় বেশ বেড়েছে এবং এবারও তা বাড়বে। বছর ব্যবধানে গত নভেম্বরে দেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা অক্টোবরে কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ। যদিও এক বছর আগের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে, পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়ে গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দাঁড়ায় ১৮ বিলিয়ন ৮৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলারে। পোশাক খাতের মোট বিনিয়োগের এক তৃতীয়াংশই এখন রয়েছে উন্নত মানের পোশাক তৈরিতে। একই সঙ্গে বাড়ছে নতুন বাজার ও ক্রেতা। তবুও গত মাসে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের ধাক্কা আর আসছে নির্বাচনী ডামাডোলে বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ সাবধানী ক্রেতারা, যা আগামী বছর জুড়েই ভোগাবে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। এমন শঙ্কা প্রকাশ করেই বিজিএমইএ পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, সবদিক বিবেচনা করলে ২০২৪ সালে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। নির্বাচনের পূর্ববর্তী বা পরবর্তী যে পরিস্থিতি হতে পারে, সেটি নিয়ে ক্রেতারা একটু সাবধানে রয়েছেন। কারণ, তাদের সবসময় ঝুঁকিহীন ক্রয়নীতি মেনে চলতে হয়। সেক্ষেত্রে তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্ডার দেরি করে দিচ্ছেন। ফলে আমাদের জানুয়ারি ও ডিসেম্বর মাসের প্রোডাকশন আওয়ার লস হচ্ছে, যা আমাদের জন্য সামগ্রিকভাবে লোকসান। নির্বাচনি হিসাব-নিকাশের নানা শঙ্কা যখন ব্যবসীদের কর্ম পরিকল্পনায়, তখন তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচন ঘিরে ক্রেতারা সাবধানী ক্রয়াদেশ দেয়ার পরও ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ভালো উত্থান দেখেছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। তাছাড়া শঙ্কা জাগানিয়া ২০১৪ সালের নির্বাচনও দিয়েছে স্বস্তির খবর। তবে এবার অবশ্য নির্বাচনের সঙ্গে রয়েছে বৈশ্বিক মন্দা। কিন্তু বৈচিত্র্যময় পণ্যে ভর করে নতুন বাজার ধরে সব শঙ্কা দূর করতে চায় বিজিএমইএ। এ প্রসঙ্গে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কোন দেশের জন্য কোন পণ্যটি ভালো, আমরা সেটি নিয়ে গবেষণা করে বৈচিত্র্যময় পণ্য আনতে কাজ করছি।