ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে নিট পোশাক রপ্তানিতে প্রথমবারের মতো চীনকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। গত সোমবার ইইউর পরিসংখ্যান দপ্তর ইউরোস্ট্যাটের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এতে জানানো হয়, শুধু চীন নয়, ভারত, তুরস্ক ও ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বিজিএমইএ। বিজিএমইএ জানায়, এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে নিটওয়ার সাব ক্যাটাগরিতে যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের হিসাবে নিটওয়ার খাতে পণ্যের পরিমাণ ও মূল্য দুই দিক থেকেই বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে রয়েছে। এ সময়ে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে মোট ৯০০ কোটি ২৫ লাখ (৯ বিলিয়নের একটু বেশি) ডলারের নিট পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ওজনে রপ্তানি করা নিট পোশাকের পরিমাণ ৫৭ কোটি ১০ লাখ কেজি। উল্লিখিত সময়ে চীন থেকে ইইউতে রপ্তানি করা ৪৪ কোটি ২০ লাখ কেজি নিট পোশাকের মূল্য দাঁড়ায় ৮৯৬ কোটি ডলার। তবে ইইউতে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে এখনও চীন শীর্ষে রয়েছে। বাংলাদেশের স্থান দ্বিতীয়। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ইইউতে নিট পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০৩ কোটি ৩ লাখ কেজি। মূল্য ৭৩০ কোটি ডলার। ২০২২ সালের ১২ মাসের রপ্তানি বিচারে এ বছর নয় মাসেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। ইইউতে তৃতীয় স্থানে থাকা তুরস্কের রপ্তানির পরিমাণ ৪৬৪ কোটি ডলার। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটির রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য ১৭১ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। শীর্ষ পঞ্চম স্থানে থাকা কম্বোডিয়া গত ৯ মাসে ইইউতে রপ্তানি করেছে ১৫২ কোটি ৪১ লাখ ডলারের নিট পোশাক।
ষষ্ঠ স্থানে ভিয়েতনাম। রপ্তানি করা নিট পোশাকের মূল্য ১২৪ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। বৈশ্বিক মন্দার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পণ্যের ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার কথা বলে আসছিলেন বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকরা। গত দুই মাস ধরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও হয়ে যাচ্ছিল নেতিবাচক। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক রপ্তানির সূচকে এই ইতিবাচক খবর এলো। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘ভলিউম বিবেচনায় ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ চীনকে প্রথমবারের মতো পেছনে ফেলেছিল। নিট পোশাকের এই অর্জন সেই রেকর্ডকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে এক দশমিক ৩৩ বিলিয়ন কেজি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। সেই বছর চীন থেকে রপ্তানি হয়েছিল ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন কেজি। তবে দামের বিচারে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন, যা চীনের রপ্তানি মূল্যের চেয়েও একটু কম।’ ফারুক হাসান আরও বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির চিত্র শক্তিশালী হচ্ছে। চলতি ২০২৩ সালে নিট পোশাক একটা উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছাল। এ ধরনের অর্জন বিশ্ববাজারে আমাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সুতার পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখল করতে পারবে। এর কারণ হচ্ছে, সম্প্রতি নিট পোশাক খাতে দামি পণ্যে বিনিয়োগের ফলে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে ভালো করছে।’