অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৩ বছর ধরে বাড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই প্রথমবারের মতো নতুন বাজার হিসেবে পরিচিত তিনটি গন্তব্যে পণ্যটির রপ্তানি ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য এখন নতুন বাজার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার আগের অর্থবছরে নতুন বাজারের মধ্যে শুধু জাপানে ১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ছিল। তবে এই তিনটি দেশই পোশাকের নতুন বাজার হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে পোশাক শিল্পখাত থেকে। তবে, দেশের পোশাকের বাজার যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ কেন্দ্রিক। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নতুন বা অপ্রচলিত বাজারের দিকে ঝুঁকছেন উদ্যোক্তারা। অতিনির্ভরতা এড়াতে অপ্রচলিত বাজার সম্প্রসারণে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। সরকারের পক্ষ থেকেও রপ্তানিতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পোশাকের অপ্রচলিত বাজার। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানির গতিও ধারাবাহিক। বৈশ্বিক নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বাড়ছে রপ্তানি। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বেড়েছে অন্যসব বাজারের তুলনায়। রপ্তানিকারকদের আস্থাও বাড়ছে এসব দেশে। উদ্যোক্তাদের নানা উদ্যোগ ও রপ্তানিতে সরকারের নগদ সহায়তা অপ্রচলিত বাজার সম্প্রসারণে উৎসাহ জোগাচ্ছে। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বলছে, বর্তমানে দেশের প্রচলিত ও প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।
এসব বাজারে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ বেশি। এসব বাজারের বাইরের দেশগুলোকে অপ্রচলিত বা নতুন বাজার হিসেবে দেখা হয়। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, রাশিয়া, আরব আমিরাত, কোরিয়া ও ভারতে রপ্তানি বেশি। চীন অনেক বাজার থেকে সরে এসেছে। তারা নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে কিছু বাজার থেকে। বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সেসব বাজারে আস্থা অর্জন করছে। জাপান থেকে সরে গেছে চীন। সেখানে যে গ্যাপ তৈরি হয়েছে সেটা পূরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এভাবে সুযোগ তৈরি হয়েছে অপ্রচলিত বাজারে। রপ্তানিও বাড়ছে, আগামীতে আরও বাড়বে। বিজিএমইএ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, অর্থবছরের তিন মাসে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এসময়ে রপ্তানির পরিমাণ ২২৪ কোটি ২৪ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে একক দেশ হিসেবে দেশের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে দুই দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর জোটগতভাবে প্রধান বাজার ইইউতে (২৭ দেশ) রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সে হিসাবে ধারাবাহিকভাবে তুলনামূলকভাবে রপ্তানি বাড়ছে নতুন বাজারে। এ বিষয়ে কথা হলে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের (বিএই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, অপ্রচলিত বাজারে কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি করেছে বিজিএমইএ। এসব বাজারে স্থানীয় মেলা ও প্রদর্শনীতে নিয়মিত অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে উৎসাহিত হচ্ছেন দেশের পোশাকশিল্প উদ্যোক্তারা। আমরা অপ্রচলিত বাজারে মনোযোগ দিচ্ছি। সেখানে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সরকার এসব বাজারে রপ্তানিতে প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানিতেও ধারাবাহিকতা রয়েছে। - বিজিএমইএ সভাপতি বলেন।
এ শিল্প উদ্যোক্তা জানান, এখন চীন অনেক বাজার থেকে সরে এসেছে। তারা নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে কিছু বাজার থেকে। সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা সেসব বাজারে আস্থা অর্জন করছে। জাপান থেকে সরে গেছে চীন। সেখানে যে গ্যাপ তৈরি হয়েছে সেটা পূরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এভাবে সুযোগ তৈরি হয়েছে অপ্রচলিত বাজারে। রপ্তানিও বাড়ছে, আগামীতে আরো বাড়বে। অপ্রচলিত যে ১৮ দেশে বেশি পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, এর মধ্যে অন্যতম জাপান। যেখানে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৩৯ শতাংশেরও বেশি। জাপানে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক। অপ্রচলিত দ্বিতীয় প্রধান বাজার অস্ট্রেলিয়া। যেখানে জাপানের চেয়েও বেশি হারে রপ্তানি বেড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে ৫৪ শতাংশ হারে। অপ্রচলিত এ বাজারেও ধারাবাহিকতা রয়েছে রপ্তানিতে। আলোচিত সময়ে দেশটিতে মোট ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তবে, অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে ভারতে গত প্রান্তিকে রপ্তানি ৮ শতাংশ কমেছে। ভারতের বাজারে ২৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অপ্রচলিত যে ১৮ দেশে বেশি পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, এর মধ্যে অন্যতম জাপান। যেখানে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৩৯ শতাংশেরও বেশি। জাপানে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক। অপ্রচলিত দ্বিতীয় প্রধান বাজার অস্ট্রেলিয়া। যেখানে জাপানের চেয়েও বেশি হারে রপ্তানি বেড়েছে। এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমরা বিজিএমইএ’র দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই বলেছি নতুন নতুন সোর্স তৈরির জন্য। সেভাবেই কাজ করেছি। আমরা কূটনৈতিকভাবেও নানা সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পোশাকের ব্র্যান্ডিং করেছি। তিনি বলেন, আমরা অপ্রচলিত বাজারে মনোযোগ দিচ্ছি। সেখানে রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সরকার এসব বাজারে রপ্তানিতে প্রণোদনা দিচ্ছে। এতে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানিতেও ধারাবাহিকতা রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৫৪ শতাংশ
ইউরোপ-আমেরিকার মতো বড় বাজারগুলোতে দেশের পোশাক রপ্তানি কমছে। তবে আশার আলো দেখা যাচ্ছে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত নতুন বাজারগুলোতে। কারণ, নতুন বাজারগুলোতে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এর মধ্যে চমক দেখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এ বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৪ শতাংশ। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অপ্রচলিত যে ১৮ দেশ অন্যতম তার মধ্যে বড় গন্তব্য জাপান। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আয় হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশেরও বেশি। জাপানে রপ্তানির পরিমাণ অপ্রচলিত দ্বিতীয় প্রধান বাজার অস্ট্রেলিয়া। যেখানে জাপানের চেয়েও বেশি হারে রপ্তানি বেড়েছে। আলোচিত সময়ে দেশটিতে মোট ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। বিজিএমইএ ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, অপ্রচলিত যেই ১৮ দেশে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, এর মধ্যে অন্যতম জাপান। যেখানে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৩৯ শতাংশেরও বেশি। জাপানে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক।