সমীক্ষাধীন ১৫৬ দেশের মধ্যে পেঁয়াজখোর হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষ কুড়িতে নেই। বাংলাদেশ ৩৩ নম্বরে ঠাঁই পেয়েছে। পেঁয়াজ চাষের ইতিহাস ৫ হাজার বছরের। এমনকি গুহামানবও পেঁয়াজ খেত। পেঁয়াজ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে, একসময় পেঁয়াজ মুদ্রা হিসেবেও ব্যবহৃত হতে থাকে। মার্কিন সেনাপতি ও পরবর্তীকালে প্রেসিডেন্ট ইউলিসিস এস গ্র্যান্ট বলেছেন, পেঁয়াজ না পেলে আমি আমার সেনাবাহিনীকে যাত্রা করার আদেশ দেব না। আমেরিকান গণযুদ্ধের সময় তিনি সৈন্যদের জন্য পর্যাপ্ত পেঁয়াজ পাওয়ার পরই তাদের মার্চ ফরোয়ার্ড করার আদেশ দেন। তার বাহিনীর সঙ্গে ট্রেনের তিনটি ওয়াগানভর্তি পেঁয়াজ দেওয়া হয়েছিল।
পাত্র এমনিতেই ভালো ছেলে, তবে একটু-আধটু পেঁয়াজ খায়। তবে সব সময় খায় না, মাংসটাংস খেলে তবেই খায়। মাংসটাংস সব সময় খায় না, নেশাটেশা করলে তবেই খায়। আর নেশাটেশাও সব সময় করে না, করে কেবল বাইজি বাড়ি গেলে। এখানেই শেষ নয়- ওয়াগান ভাঙে, জেলে থাকে, ছাড়া পেয়ে এমপি-মন্ত্রী হতে ইলেকশনে দাঁড়িয়ে যায়। অমনি পাত্রের দাম বেড়ে যায়- মন্ত্রী এমপি হলে সব কলঙ্ক ঘুচে যায়। এমনকি পেঁয়াজ সিন্ডিকেটে নেতৃত্বও দিতে পারে। পেঁয়াজখোর এবং আলুখোরের এরকম নেগেটিভ কনোটেশন বাংলা ভাষায় বহু আগেই সৃষ্টি হয়ে গেছে। এ নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই। পেঁয়াজখোর পাত্র কেবল উপলক্ষ্য। এই লেখাটি পেঁয়াজখোর সাধারণ নাগরিক ও পেঁয়াজ ব্যাপারীদের নিয়ে। পাত্র যত পেঁয়াজই খাক না কেন, তাতে কিছু এসে-যায় না; জুলিয়া চাইন্ড বলেছেন, পেঁয়াজ ছাড়া সত্যতা কল্পনাও করা যায় না। পেঁয়াজখোর শীর্ষ পাঁচটি দেশ এবং নাগরিকদের ধর্মীয় আনুগত্যের বিষয়টি দেখা যাক: উপাসনালয়ে মুসলমানদের পেঁয়াজ-রসুন খেয়ে প্রবেশ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলেছে মুসলমানরাই পেঁয়াজের শীর্ষ ভোক্তা। ২০২১ সালে এখানে মাথাপিছু পেঁয়াজ খাওয়া হয়েছে ১৬.৬ কিলোগ্রাম। একই বছর ভারতীয়দের মাথাপিছু পেঁয়াজ ভক্ষণ ১৬.৩ কিলোগ্রাম করে ৩০তম স্থান পেয়েছে। পাকিস্তানিদের ৭.৭২ কিলোগ্রাম পেঁয়াজ খাওয়া তাদের ৮১তম স্থানে স্থাপন করেছে। মুসলমানদের পেঁয়াজপ্রিয়তা পাকিস্তানের পরিসংখ্যানে প্রমাণিত হয় না। তাদের তুলনায় বরং ভারতীয় হিন্দুদেরই বেশি পেঁয়াজ খাওয়া হচ্ছে। পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে এটাও জানা আবশ্যক, এই উপাত্ত জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থাই সরবরাহ করেছে। পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ছে। চাহিদা বৃদ্ধির কারণেই উৎপাদন বাড়াতে চাষিদের মনোযোগ।
২০১৯ সালের হিসাবে, পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত পেঁয়াজ ৯৯৯৬৮০১৬ টন। একক দেশ হিসেবে উৎপাদনের শীর্ষে চীন- ২৪৯৬৬৩৬৬ টন। দ্বিতীয় স্থান ভারত- ২২৮১৯০০০ টন; তৃতীয় স্থান যুক্তরাষ্ট্রের- ৩১৭০২৭০ টন। চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে পৃথিবীর মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশের বেশি পেঁয়াজ ফলিয়ে থাকে। চতুর্থ অবস্থানে মিসর- ৩০৮১০৪৭ টন।