কৃষিঋণ : চার মাসে বিতরণ ১১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা
বেড়েছে কৃষিঋণ বিতরণ
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিয়ান স্ট্যালিন
দেশের ব্যাংকিং খাতের দৃষ্টি কৃষি খাতে। এ খাতে বিতরণকৃত ঋণের আদায়ের পরিমাণ অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে বেশি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বলতে গেলে অনেক কম। এসব কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংগুলো কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ বেশ নিরাপদ বলে মনে করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ঋণ পরিশোধের দিক থেকে বরাবরই সেরা পারফরম্যান্স আসে কৃষি খাত থেকে। খাতভিত্তিক ঋণ বিতরণের অনুপাতে আদায়ের হারের দিক থেকে কৃষির অবস্থান প্রতি বছরই শীর্ষে। এমনকি কোভিডের প্রাদুর্ভাবজনিত অর্থনৈতিক দুর্বিপাকের মধ্যেও কৃষি খাত থেকে ঋণের অর্থ আদায় হয়েছে বিতরণের চেয়ে বেশি। গ্রাহক হিসেবে কৃষকরা সেরা হলেও এখনো দেশের কৃষি জিডিপির বিপরীতে কৃষি ঋণের হার ১০ শতাংশেরও অনেক নিচে। তবে কৃষি খাতে ঋণ বিতরনের চিত্র পরিবর্তন হচ্ছে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এসব বিষয় মাথায় রেখে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশের কৃষি খাত বর্তমানে একটি সুসময় পার করছে। কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন এমন এক সময়ে এসেছে, যখন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে থিঙ্ক-ট্যাঙ্কগুলো বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের পূর্বাভাস দিচ্ছে। মূলত কোভিড এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে কৃষি খাতও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। গত চার মাসে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে ১১ হাজার ৯৬০ কোটি ৫১ লাখ টাকা, যা ওই সময়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বেশি। মূলত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৬৬৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চার মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং দেশি-বিদেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৮ হাজার ১৯১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য কমপক্ষে ২ শতাংশ কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে। যেসব ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ করবে না, তাদের জরিমানার ব্যবস্থা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে প্রতি বছরই সাধারণ ঋণ বিতরণের পাশাপাশি বাড়ছে কৃষি ঋণ বিতরণ। এজন্য বছরের শুরুতে লক্ষ্যও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে বছরের বারো মাস বিশেষ করে ফসল চাষের শুরুতে কৃষকরা সময় মতো ঋণ পান। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ১৪ বছরে আগে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার নিচে। ১৪ বছরে কৃষি ঋণ বিতরণ তিনগুণ ছাড়িয়ে গেছে। কৃষিঋণ বিতরণে পরিমাণের পাশাপাশি মানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে সব ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করে সেজন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেসব বাণিজ্যিক ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে নিজস্ব শাখা নেই, সেসব ব্যাংক ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থার বা এনজিও মাধ্যমে বিতরণ করে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (এমআরএ) নিবন্ধিত ক্ষদ্র ঋণ সংস্থার মাধ্যমে কৃষি ঋণ বিতরণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুদ নির্ধারণেও এমআরএ নির্ধারিত সুদ হারের যাতে বেশি সুদ না নিতে পারে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
কৃষি ঋণ বিতরণের পাশাপাশি কৃষকের ফেরত দেওয়া ঋণের হার সন্তোষজনক। আবার কৃষি ঋণে খেলাপি কৃষকের হারও তুলনামূলক কম। তথ্য বলছে, কৃষি ঋণে খেলাপির হারও ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। অক্টোবর শেষে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ (আউটস্ট্যান্ডিং) ৫৪ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আগামীতে খাদ্যের উৎপাদন ও খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে কৃষি খাতে শস্য ও ফসল চাষের জন্য কৃষক পর্যায়ে স্বল্প সুদে কৃষিঋণ প্রদান করা অত্যাবশ্যক। আমদানি বিকল্প ফসলসমূহ (ডাল, তেলবীজ, মসলাজাতীয় ফসল ও ভূট্টা) চাষ করার জন্য কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে কৃষি ঋণ বিতরণের জন্য তপশিলি ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। এই ক্ষেত্রে আমদানি বিকল্প ফসলসমূহের পাশাপাশি কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচিতে উল্লিখিত ধান, গমসহ সব দানা শস্য, অর্থকরী ফসল, শাকসবজি ও কন্দাল ফসল চাষের জন্যও সুদণ্ডক্ষতি সুবিধার আওতায় কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা হিসেবে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে কৃষিঋণ বিতরণের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিতরণ করা কৃষিঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকৃত সুদণ্ডক্ষতি বাবদ ৫ শতাংশ হারে সুদ ক্ষতি প্রদান করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, এই স্কিমের মেয়াদ হবে চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত। চলমান এবং নতুন ঋণগ্রহীতা উভয় ক্ষেত্রেই কৃষকপর্যায়ে সুদের হার সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ হবে।